দৈনন্দিন জীবনে বাস্তুশাস্ত্র
বাস্তুশাস্ত্র কাকে বলে: বাস্তু কথাটা এসেছে সংস্কৃত শব্দ বস্তু থেকে। শব্দটির অর্থ – যেকোনো সৃষ্টিই হল বাস্তু। আবার বস্তু হল "ভূ"। অর্থাৎ পৃথিবী। এই পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি হওয়া সমস্ত কিছুই বাস্তু। বাস্তু শব্দের অর্থ ঘর, থাকার জায়গা। শাস্ত্র মোটামুটিভাবে শিক্ষার অনুবাদ। অতএব, বাস্তুশাস্ত্রকে জীবিত বা স্থাপত্যের বিজ্ঞানে অনুবাদ করা যেতে পারে। যদিও এটি একটি প্রাচীন বিজ্ঞান, এটি এখনও ব্যবহৃত হয়। অনেক লোক তাদের বাড়ির বিভিন্ন অংশ পুনর্নির্মাণ বা নির্মাণ করার সময় বাড়ির জন্য Vastu Shastra Tips ব্যবহার করে। এটি করা নিশ্চিত করে যে এমন কোনও বাস্তু দোষ নেই যা জীবনকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে কঠিন করে তোলে। বাস্তুশাস্ত্র একটি উন্নত জীবনের দিকে পরিচালিত করে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যার গুরুত্ব ও প্রভাব অনেক খানি।
![]() |
বাস্তুশাস্ত্র কাকে বলে। বাস্তুশাস্ত্র টিপস্। Vastu Shastra |
দৈনন্দিন জীবনে বাস্তুশাস্ত্রের গুরুত্ব
বাস্তু আমাদের জীবনে বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে আসে, যেমন ক্যারিয়ারের স্থিতিশীলতা, একাডেমিক বৃদ্ধি, ভালো মানসিক স্বাস্থ্য, ভালো সম্পর্ক এবং আরও অনেক কিছু। মহাবিশ্বের
ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় শক্তি রয়েছে। বাস্তুর লক্ষ্য এই নেতিবাচক শক্তিগুলিকে
অপসারণ করা এবং ইতিবাচক স্পন্দন বাড়ানো।
আরও পড়ুনঃ- তুলসী গাছের বাস্তুসম্মত দিক
পঞ্চভৌতিক তত্ত্ব ও বাস্তু
আকাশ / ব্যোম ——-
পৃথিবী বিশ্বব্রহ্মান্ডের অনন্ত
মহাশূন্যের একটি স্থানে ঘূর্ণায়মান অবস্থায় বিরাজ করছে। পৃথিবীর প্রাণিজগতের
ওপরও এর প্রভাব প্রতিফলিত হয় নিরন্তর।
বায়ু /
মরুৎ
আমরা জানি বায়ু হল বিভিন্ন গ্যাসের সমন্বয়। বায়ু
প্রাণিজীবনের প্রধান অঙ্গ। বায়ু ছাড়া
কোনও প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। বায়ু
শব্দকে বহন করে আর বায়ু থেকেই আসছে অনুভূতি বা স্পর্শ। এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল
স্পর্শ এবং শব্দ।
অগ্নি / তেজ
অগ্নি হল সমস্ত শক্তির উৎস। তাপ এবং আলোবিহীন
জীবন আমরা ভাবতেই পারি না। এর বৈশিষ্ট্য হল শব্দ ,
স্পর্শ ও রূপ।
জল / অপ্
জলের তিনটি অবস্থা: তরল , কঠিন ( বরফ ) , এবং বাতাসে মিশ্রিত ( অদৃশ্য ) জলীয় বাষ্প।
মেঘ হল জলীয় বাষ্প সম্পৃক্ত বাতাসে ঘনীভূত জলবিন্দুর সমষ্টি।
প্রাণীজীবনে অন্যতম এবং মূল্যবান উপাদান হল জল। পৃথিবীর জল আছে বলেই প্রাণের এত প্রাচুর্য।
পৃথিবী / ক্ষিতি
ধরিত্রী বা পৃথিবী হল বৃহৎ একটি চুম্বক যার মধ্যে আছে উত্তর
মেরু এবং দক্ষিণ মেরু। এর জন্যেই সৃষ্টি হচ্ছে নানাবিধ আকর্ষণ। পৃথিবীর এই
চৌম্বকক্ষেত্র জুড়ে রয়েছে মাধ্যকর্ষণ শক্তি। আর এর থেকেই পৃথিরীর সমস্তবিষয়ে
চেতন এবং অবচেতনের ফল লক্ষ করা যায়।
আরও পড়ুনঃ- ফেংশুই কি?
·
বাস্তু বিচার বহু
প্রাচীন যুগ থেকেই চলে আসছে
·
ঘরের আসবাব,
বাগান তৈরি প্রতিটা ক্ষেত্রই হতে পারে
বাস্তু মেনে
·
বাস্তুশাস্ত্র
অনুযায়ী রয়েছে আটটি দিক
· এই প্রত্যেকটি দিকের রয়েছে আলাদা আলাদা গুরুত্ব
বাস্তুতন্ত্র এবং বাস্তু বিচার বহু প্রাচীন যুগ থেকেই চলে আসছে। নতুন বাড়ি বা ফ্ল্যাট থেকে শুরু করে ঘরের আসবাব, বাগান তৈরি প্রতিটা ক্ষেত্রই হতে পারে বাস্তু মেনে। বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী রয়েছে আটটি দিক যেমন, উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম, ঈশান, নৈর্ঋত, অগ্নি এবং বায়ু। আর আপনার বাস্তুতে এই প্রত্যেকটি দিকের রয়েছে আলাদা আলাদা গুরুত্ব।
![]() |
বাস্তুশাস্ত্র কাকে বলে। বাস্তুশাস্ত্র টিপস্। Vastu Shastra |
পূর্বদিক- পড়ার ঘর, পুজোর ঘর, কাজের ঘর এগুলি এই দিকে মুখ করে করা যেতে
পারে। এমনকি বাড়ির আলমারী বা সিন্দুকও এই দিকে মুখ করে খোলা বাস্তুমতে ভালো।
বাড়িতে এইদিকে খোলা জায়গা থাকা বেশ ভালো কারণ বাস্তুমতে এটি দেবরাজ ইন্দ্র দিক।
পশ্চিমদিক- বাড়ির এই দিকে স্টোর
রুম, সিঁড়ি বা জলের ট্যাংক করতে পারেন। বাস্তুমতে এই দিক বরুণ দেবতার দিক।
উত্তরদিক- বাড়ির এই দিকে কখনই
শৌচালয় বানাবেন না। কারণ এই দিক বাস্তুমতে কুবেরের দিক। তাই এই দিকে সিন্দুক বা
টাকা রাখার জায়গা রাখতে পারেন।
দক্ষিণদিক- বাড়ির এই দিকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু রাখবেন না। বাস্তুমতে এই দিক যমের দিক।
বিশেষ করে খাবার টেবিল বা রান্নাঘর এই দিকে কখনই করবেন না।
ঈশানদিক- এই দিক বাড়ির জন্য
খুব শুভ। এই দিক দেবাদিদেব মহাদেবের দিক। তাই বাড়ির এই দিকে কিছুটা ফাঁকা জায়গা
রাখুন। বাড়ির এই দিকে কোনও সমস্যা হলে বংশবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও সমস্যা হয় বলে মনে
করেন বিশেষজ্ঞরা।
নৈর্ঋতদিক- বাস্তুমতে এইদিক আপনার জীবন থেকে দানবদের রক্ষা করে। এই শব্দের অর্থ হল দানব। বাড়ির এই দিকে
জলের ট্যাংক কখনই করবেন না।
অগ্নি- বাড়ির এই দিকে
স্নানাগার,
শৌচালয়ের মতো কিছু রাখবেন না। বাড়ির এই দিক অগ্নিদেবের দিক।
বায়ু- উন্নত স্বাস্থ্য বা
দীর্ঘজীবন দিতে পারে এই দিক। এই দিক পবন দেবের দিক। পরিবারের পারস্পরিক সম্পর্ক
টিকিয়ে রাখার জন্য এইদিক খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই দিক তাই ব্যবহার করুন বৈঠকখানা
হিসেবে। যেখান ঘরের সকল সদস্য একসঙ্গে বসতে পারবে। তবে এইদিকে খাবার ঘর করা যাবে
না বা শোওযার ঘর হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে না।
বাড়ির জন্য বাস্তুশাস্ত্র টিপস
বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে, আপনার
বাড়ির ঘরগুলি বর্গাকার বা আয়তাকার হওয়া উচিত। এছাড়াও আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে
যে আপনার ঘরগুলি বাতাসযুক্ত, পরিষ্কার, উজ্জ্বলভাবে
আলোকিত এবং ভালভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। এমনকি সমস্ত কক্ষের কোণগুলি যতটা
সম্ভব উজ্জ্বল হওয়া উচিত।
বাড়ির সদর দরজার জন্য বাস্তু দিকনির্দেশ
সমস্ত দরজা, বিশেষ করে প্রধান দরজা ভিতরে খোলা উচিত যাতে শক্তি বাড়ির ভিতরে থাকে। আপনার
বাড়ি থেকে ভাঙা বা ক্ষতিগ্রস্থ সরঞ্জামগুলিও ফেলে দেওয়া উচিত।
স্টাডি রুমের জন্য বাস্তু টিপস
শিক্ষার্থীদের
অধ্যয়নের সময় পূর্ব দিকে মুখ করা উচিত এবং অধ্যয়নের টেবিল এবং দেয়ালের মধ্যে
ফাঁকা থাকা উচিত। অধ্যয়নটিকে হলুদ রঙে রঙ করারও পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ এটি আরও
স্পষ্টতা আনে এবং ফোকাস বাড়ায়।
বেডরুমের জন্য বাস্তু টিপস
কখনোই উত্তর
দিকে মাথা রেখে ঘুমাবেন না কারণ এটি দুঃস্বপ্নের কারণ হতে পারে। গোলাকার বা
ডিম্বাকার বা হেডরেস্ট ছাড়া বিছানায় ঘুমানো এড়িয়ে চলা উচিত। মারামারি প্রতিরোধ
করতে,
বেডরুমের জানালায় ক্রিস্টাল সহ একটি উইন্ডচাইম ঝুলিয়ে
দিন। বাড়ির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বাস্তু টিপস হল শোবার ঘরে কখনও মন্দির
তৈরি করবেন না।
লকার জন্য বাস্তু দিকনির্দেশ
নগদ-লকার ঘরের
দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পশ্চিম দেওয়ালে রাখতে হবে। একটি খুব চমৎকার বাস্তু টিপস হল
লকারের সামনে একটি আয়না রাখা কারণ এটি অর্থ দ্বিগুণ হওয়ার প্রতীক! আরেকটি
পরামর্শ হল একটি বেগুনি পাত্রে একটি মানি প্ল্যান্ট রাখা। যেহেতু বেগুনি রঙ মানে
সম্পদ,
তাই এটা করলে আর্থিক স্থিতিশীলতা আসবে।
আরও পড়ুনঃ কুবের মন্ত্র
১০ টি বাস্তু টিপস
১. ডাইনিং টেবিল কখনই
প্রধান দরজার সামনে অর্থাৎ মুখোমুখি হওয়া ঠিক নয়। দরজা থেকে যেন টেবিল দেখা না
যায়।
২. উত্তর- পূর্ব দিকে
তুলসী গাছ রাখা উচিৎ।
৩. যেখানে আপনি টাকা
রাখেন সেই স্থান সব সময়ে দক্ষিণ দিকে হওয়া উচিৎ।
8.
পরিবারের আর্থিক উন্নতির জন্য বসার ঘরে
লাল রঙের ঘোড়ার ছবি ঝুলিয়ে রাখতে পারেন।
৫. বাড়িতে যদি বাগান করেন তবে তা পূর্ব দিকে করুন।
৬. বেডরুম করুন বাড়ির পশ্চিম দিকে।
৭. বাড়িতে ঢোকার মুখে যদি কোনো ফাঁকা দেওয়াল থাকে তবে তাতে ছবি
ঝুলিয়ে রাখুন , ফাঁকা
রাখবেন না।
৮. চেষ্টা
করুন বাড়ির দরজা জানলার যোগফল যেন জোড় সংখ্যার হয়।
৯. রাতে
শোয়ার সময় স্ত্রী স্বামীর বাঁদিকে শুলে দাম্পত্য শান্তি বজায় থাকে।
১০. রান্নাঘরে গ্যাস ও
জলের কল যতটা সম্ভব দূরে রাখুন।
FAQ:
প্রঃ বাস্তুশাস্ত্র কাকে বলে?
উঃ বাস্তু কথাটা এসেছে সংস্কৃত শব্দ বস্তু থেকে। শব্দটির অর্থ – যেকোনো সৃষ্টিই হল বাস্তু। আবার বস্তু হল "ভূ"। অর্থাৎ পৃথিবী। এই পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি হওয়া সমস্ত কিছুই বাস্তু। বাস্তু শব্দের অর্থ ঘর, থাকার জায়গা। শাস্ত্র মোটামুটিভাবে শিক্ষার অনুবাদ। অতএব, বাস্তুশাস্ত্রকে জীবিত বা স্থাপত্যের বিজ্ঞানে অনুবাদ করা যেতে পারে। যদিও এটি একটি প্রাচীন বিজ্ঞান, এটি এখনও ব্যবহৃত হয়।
প্রঃ বাস্তুশাস্ত্র মতে রান্নাঘর
উঃ বাস্তু শাস্ত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে রান্না ঘরকে, এখানে জল ও আগুন দুই থাকে। বাস্তু শাস্ত্র অনুসারে, রান্নাঘরের সিঙ্ক যেন থাকে উত্তর-পূর্বে চাইলে উত্তর কিংবা পূর্ব দিকেও রাখতে পারেন। বেসিনের কল যদি খারাপ হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সারিয়ে নিন। কল দিয়ে সারাক্ষণ টপ টপ করে জল পড়া ভালো নয়। রান্না ঘরে বেসিন আর গ্যাসের ওভেন (Oven) পাশাপাশি রাখতে নেই। বাস্তু, মতে, গৃহিনীদের সব সময় পূর্ব দিকে মুখ করে রান্না করা উচিত। বাস্তু শাস্ত্রের মতে আগুনের উৎস গুলি বাড়ির দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রাখতে হবে।
প্রঃ বাস্তুশাস্ত্র টিপস্
চেষ্টা করুন বাড়ির দরজা জানলার যোগফল যেন জোড় সংখ্যার হয়।
বাড়িতে ঢোকার মুখে যদি কোনো ফাঁকা দেওয়াল থাকে তবে তাতে ছবি ঝুলিয়ে রাখুন , ফাঁকা রাখবেন না।
উত্তর- পূর্ব দিকে তুলসী গাছ রাখা উচিৎ।
পরিবারের আর্থিক উন্নতির জন্য বসার ঘরে লাল রঙের ঘোড়ার ছবি ঝুলিয়ে রাখতে পারেন।
0 মন্তব্যসমূহ