Banner

দূর্গা পূজার নিয়মাবলী | ইউনিক্স স্বীকৃতি প্রাপ্ত Kolkata-র Durga Puja

 

দূর্গা পূজা -র অকাল বোধন দেবীপক্ষেই ষষ্ঠী তিথিতে শুরু

দুর্গা পূজা-এ দেবীপক্ষের শুরু, মহালয়ার মাধ্যমে পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে। এই দেবীপক্ষের-ই ষষ্ঠী তিথিতে থেকে শুরু হয় দেবী মা দূর্গার অকাল বোধন। পুজোর এই কয়েক দিন, মানুষ তার জীবনের সমস্ত দুঃখ কষ্ট ভুলে নিজেকে মায়ের সেবায় নিমজ্জিত করে রাখেন। বছরের বাকি দিনগুলো সুখে-শান্তিতে কাটানোর জন্য মায়ের আশীর্বাদ পেতে নিষ্ঠাভরে পূজার্চনা করেন সকলে। Kolkata-র Durga Puja জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সামিল হয় এই আনন্দ উৎসবে।

দূর্গা পূজার নিয়মাবলী | ইউনিক্স স্বীকৃতি প্রাপ্ত Kolkata-র Durga Puja
দূর্গা পূজার নিয়মাবলী | ইউনিক্স স্বীকৃতি প্রাপ্ত Kolkata-র Durga Puja


দেবী দুর্গা, মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন, এই জন্যেই বিশ্বাস করা হয় যে, এই উৎসব খারাপ শক্তির বিনাশ করে শুভশক্তির বিজয়। আশ্বিন মাসে প্রায় দশ দিন ধরে দুর্গা পুজোর উৎসব পালিত হয়।


দুর্গা পূজার নিয়মবলী


বাঙালিদের প্রকৃত উৎসব শুরু হয় মহাষষ্ঠী থেকে। ওই তিথি থেকেই শুরু হয় নবপত্রিকা স্নান ও কলাবউ পূজার মতো অনুষ্ঠান। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা এবং ওড়িশায় ষষ্ঠী থেকে শুরু হয়ে যায় দুর্গা পূজা পুজো চলে দশমী পর্যন্ত। তবে বহু জায়গাতেই পঞ্চমী থেকেই শুরু হয় যায় অনুষ্ঠান। দুর্গাপুজোয় রয়েছে পাঁচটি বিশেষ রীতি সেগুলি যথাক্রমে বিল্ব নিমন্ত্রণ, কল্পারম্ভ, অকাল বোধন, অধিবাস এবং আমন্ত্রণ। দুর্গা পূজার প্রথম আচার হল বিল্ব নিমন্ত্রণ। বিল্ব নিমন্ত্রণ ছাড়া পুজো শুরু করা সম্ভব নয়। এই আচারে প্রথমে দেবী দুর্গাকে পবিত্র বেল পাতা দিয়ে মর্তে আমন্ত্রণ জানানো হয়। দ্বিতীয় আচার হল কল্পারম্ভ। কল্প শব্দের অর্থ হল সংকল্প। আরম্ভ অর্থ শুরু। অর্থাৎ পরবর্তী কদিন নিয়ম মেনে দেবীর পূজা করার প্রতিজ্ঞা করা হয়। এই অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় অকাল বোধন পুজো। অকাল বোধনে দেবীকে আহ্বান জানানো হয় মৃন্ময়ী মূর্তিতে চিন্ময়ী রূপে বিরাজ করা জন্য। শেষ ধাপ হল অধিবাস ও আমন্ত্রণ। এই রীতিগুলিও দেবীকে পূজাস্থানে আসন গ্রহণ করা ও ভক্তের দ্বারা পূজা গ্রহণ করতে অনুরোধ করারই প্রতীক।

ষষ্ঠীর দিন বোধনের মাধ্যমেই শুরু হয় দুর্গা পুজো। দেবীপক্ষের শুক্লা ষষ্ঠী তিথিতে হয় মা দুর্গার বোধন। দুর্গা পুজোর এই রীতির সঙ্গে জড়িত আছে পৌরাণিক কাহিনী। বোধন কথার অর্থ হল জাগ্রত করা। মনে করা হয়, শরৎকালে দুর্গা পুজোর সূচনা করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। লঙ্কার রাজা রাবণকে পরাজিত করার জন্য দেবীর আশীর্বাদের কামনায় তিনিই এই সময় দুর্গা পুজো করেন। বোধনের মাধ্যমেই দুর্গাকে আবাহন করা হয়। আর তাতে রামচন্দ্রকে সাহায্য করেছিলেন স্বয়ং ব্রহ্মা।

দূর্গা পূজার নিয়মাবলী | ইউনিক্স স্বীকৃতি প্রাপ্ত Kolkata-র Durga Puja
দূর্গা পূজার নিয়মাবলী | ইউনিক্স স্বীকৃতি প্রাপ্ত Kolkata-র Durga Puja


মহাসপ্তমীতে মহাপুজো হয়। সূর্য ওঠার আগেই, একটি কলাগাছ পবিত্র গঙ্গার জলে স্নান করিয়ে, তারপর এটিকে নববধূর (কলা বউ) মতো নতুন শাড়ি পরানো হয়। 

গণেশ বন্দনা, প্রণাম মন্ত্র

বিশ্বাস করা হয় যে দেবী দুর্গা মহাঅষ্টমীতে মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। এই দিন ভক্তেরা পুষ্পাঞ্জলির মাধ্যমে দেবীকে আরাধানা করেন। ৯ বছরের কম বয়সী মেয়েরা, এদিন দেবী দুর্গা রূপে পূজিত হন। এই আচারটি 'কুমারী পূজা' নামে পরিচিত। এরপরে, অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে হয় 'সন্ধি পুজো' 

দূর্গা পূজার নিয়মাবলী | ইউনিক্স স্বীকৃতি প্রাপ্ত Kolkata-র Durga Puja
দূর্গা পূজার নিয়মাবলী | ইউনিক্স স্বীকৃতি প্রাপ্ত Kolkata-র Durga Puja


সন্ধি পুজো' শেষ হলে শুরু হয় মহানবমী। নবমীর সন্ধ্যাবেলা, দেবীর 'মহা আরতি' করা হয়।
দূর্গা পূজার নিয়মাবলী | ইউনিক্স স্বীকৃতি প্রাপ্ত Kolkata-র Durga Puja
দূর্গা পূজার নিয়মাবলী | ইউনিক্স স্বীকৃতি প্রাপ্ত Kolkata-র Durga Puja

দুর্গা পুজোয় ধুনুচি নাচের রীতি বহু পুরানো। দুর্গা পূজা চলাকালীন ঢাকের তালে তাল মিলিয়ে ধুনুচি নাচে মেতে ওঠেন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলে।

শনি দেবের প্রকোপ থেকে বাঁচতে চান

দুর্গাপূজার অন্ত চিহ্নিত হয় 'বিজয়া দশমী'-র মাধ্যমে। বিজয়ার দিনে সিঁদুর খেলা দুর্গাপুজোর একটি বিশেষ অনুষ্ঠান। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে বাপের বাড়ি ছেড়ে মা দূর্গা পাড়ি দেন স্বামীগৃহ কৈলাসে। পতিগৃহে রওনা দেওয়ার আগে উমাকে বরণ করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। তাই, দশমীর দিন ঘরের মেয়েকে সিঁদূরে রাঙিয়ে, মিষ্টি মুখ করিয়ে, পান, ধান, দূর্বা দিয়ে বরণ করা হয়। দেবীর বরণের পরই সধবা মহিলারা মেতে ওঠেন সিঁদূর খেলায়।

দূর্গা পূজার নিয়মাবলী | ইউনিক্স স্বীকৃতি প্রাপ্ত Kolkata-র Durga Puja
দূর্গা পূজার নিয়মাবলী | ইউনিক্স স্বীকৃতি প্রাপ্ত Kolkata-র Durga Puja


এরপর আসে মায়ের বিসর্জনের পালা, সকল মন ব্যথাতুর করে মা দুর্গা কৈলাসে পাড়ি দেন। আর আমাদের মনের মাঝে ছড়িয়ে যান আনন্দ উৎসবের রেশ। 

দুর্গাপূজাকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি দিতে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ১ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে আয়োজিত কর্মসূচিতে UNESCO হেরিটেজ এর অন্তর্ভুক্ত করা হল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় রাজ্যবাসীকে এই খুশীর জানান (UNESCO Durga Puja 2022)প্রসঙ্গত, ইউনেস্কো পশ্চিমবঙ্গের দুর্গা পূজাকে (বেঙ্গল ট্যুরিজম) স্বীকৃতি দিয়েছে

FAQ:

প্রঃ মাদূর্গা প্রণাম মন্ত্র

উঃ মা দুর্গার প্রণাম মন্ত্র

সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোস্তু তে
জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী

দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোস্তু তে
সর্বস্বরূপে সর্বেশে সর্বশক্তিসমন্বি তে
ভয়েভ্যস্ত্রাহি নো দেবি দুর্গে দেবি নমোস্তু তে।।

প্রঃ সন্ধি পূজা কি

উঃ অষ্টমী তিথির শেষ ২৪মিনিট ও নবমী তিথির শুরুর প্রথম ২৪ মিনিটের যে সন্ধিক্ষণ সেই সন্ধিক্ষণে তন্ত্রমন্ত্র উচ্চারণ করে পুরোহিতরা দেবী দূর্গা‌র যে পূজা সম্পন্ন করেন, সেটাই হল সন্ধি পূজা।  

প্রঃ বাংলায় দুর্গা পূজার ইতিহাস

উঃ কারও মতে ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে দিনাজপুরের জমিদার প্রথম দুর্গাপূজা করেন। আবার কারও মতে, ষোড়শ শতকে রাজশাহী তাহেরপুর এলাকার রাজা কংশ নারায়ণ প্রথম দুর্গাপূজা করেন। ১৫১০ সালে কুচ বংশের রাজা বিশ্ব সিংহ কুচবিহারে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। অনেকে মনে করেন, ১৬০৬ সালে নদীয়ার ভবনানন্দ মজুমদার দুর্গাপূজার প্রবর্তক। ১৬১০ সালে কলকাতার সুবর্ণ রায় চৌধুরী সপরিবারে দুর্গাপূজা চালু করেন। 

প্রঃ অকাল বোধন কেন বলা হয়

উঃ কালিকা পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণ অনুসারে, রাম ও রাবণের যুদ্ধের সময় শরৎকালে দুর্গাকে পূজা করা হয়েছিল। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, শরৎকালে দেবতারা ঘুমিয়ে থাকেন। তাই এই সময়টি তাঁদের পূজা যথাযথ সময় নয়। অকালের পূজা বলে তাই এই পূজার নাম হয় ‘অকালবোধন’। এই দুই পুরাণ অনুসারে, রামকে সাহায্য করার জন্য ব্রহ্মা দুর্গার বোধন ও পূজা করেছিলেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ