আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ("বাংলা") দিবসের তাৎপর্য
বাংলা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস- মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদার স্বমহিমা বজায় রাখতে ভাষা শহীদদের আত্মবলিদানের কথা স্মরণ করে ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তারপর সমগ্র বাংলা তথা বিশ্বজুড়ে এই বিশেষ দিনটি সগৌরবে পালিত হয়।
ভাষা হল পরস্পরের ভাব প্রকাশের মাধ্যম। যদিও এটা বলা খুব কঠিন যে মানুষ কবে থেকে প্রথম কথা বলতে শিখেছে। প্রস্তর যুগে যখন প্রাচীন মানুষ তখন থেকেই নিজেদের মধ্যে অনুভূতি প্রকাশ বা ভাব বিনিময়ের জন্য বাধ্য হয়েই তারা ভাষা তৈরি করেছিল।
![]() |
বাংলা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস | বাংলা মাতৃভাষা দিবস |
আরও পড়ুনঃ বার্ষিক রাশিফল বাংলা ১৪৩০
মাতৃভাষা বাংলার ইতিহাসঃ
খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে
প্রাচীন ব্রাহ্মী লিপির প্রচলন ছিল। এরও বহু পরে খ্রিস্টপূর্ব ২৫০ অব্দের প্রায়
কাছাকাছি সময়ে সম্রাট অশোকের লিপি সৃষ্টি হয়েছিল। এক হাজার খ্রিস্টাব্দের সময় নাগাদ প্রাচীন বাংলা
লিপির সৃষ্টি হয়েছিল। অনেক পরিবর্তনের পথ বেয়ে বাংলা লিপিরও সৃষ্টি হয়। বাংলা
ভাষার নিজস্ব বর্ণমালাও আছে। যেখানে বহু ভাষারই নিজস্ব কোনও বর্ণমালা নেই, বাংলা
ভাষার নিজের বর্ণমালা থাকা বাংলা ভাষাভাষীদের তথা সমগ্র বাঙালীর কাছে অবশ্যই বিরাট
গৌরবের বিষয়। আমরা বিশ্বাস করি নিখাদ বাঙালিয়ানায়। বিদেশে থেকেও। আমরা ১লা বৈশাখে আটপৌরে করে দামি ঢাকাই শাড়ী পড়ি। কপালে লাল টিপ,
শাখা সিঁদুর। বাংলা ভাষার ব্যবহার এখন পৃথিবীর এক
বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর দ্বারা ব্যবহৃত ভাষা। পৃথিবীর জনসংখ্যার নিরিখে প্রায় ২৩ কোটি
মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। বিশ্বে বহুল প্রচারিত ভাষাগুলির মধ্যে সংখ্যানুসারে বাংলা
ভাষার স্থান চতুর্থ থেকে সপ্তমের মধ্যে। ইংরাজি, চৈনিক, স্প্যানিশ
ইত্যাদির পরই বাংলা ভাষার স্থান। সংস্কৃত পালি ও প্রাকৃত ভাষার মধ্য দিয়ে বাংলা
ভাষার উদ্ভব হয়েছে।
মাতৃভাষা দিবস ২১ শে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য ও গুরুত্ব
বাঙালি জাতি দীর্ঘদিন ঔপনিবেশিক
শাসন শোষণের জাঁতাকলে কষ্টভোগ করেছে ব্রিটিশরাজদের কাছ থেকে মুক্ত হবার পর
ভারতবর্ষ তিন খণ্ডে দুটি রাষ্ট্রে ভাগ হয় ভারত-পাকিস্তান । পাকিস্তান
অংশের বাঙালিরা ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দর্শনকে মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেনি। আর
গান্ধীজির ধ্যানের ভারত দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ হলেও জন্মলগ্ন থেকেই
ধর্মনিরেক্ষপতায় বিশ্বাসী হয়ে রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তোলে। বাঙালি অধু্যষিত
তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা সাম্প্রদায়িক ভেদনীতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে
পারে না। ১৯৪৮
সালে ঢাকার এক সভায় পাকিস্তানের কথিত জনক মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ উদুর্কে
রাষ্ট্রভাষা হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করলে বাঙালিরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান (তখন বঙ্গবন্ধু হননি) ‘না না’ ধ্বনি
উচ্চারণ করেন উক্ত সভায়। ১৯৪৮ সালের পর থেকেই ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত। এ
আন্দোলন ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সারা দেশের মানুষ এ আন্দোলনকে সমর্থন করে। ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত থেকে পাকিস্তানি
সরকার আন্দোলন দমাতে ১৪৪ ধারা জারি করে। ছাত্ররা পূর্ব সিদ্ধান্তানুসারে এ ধারা
ভঙ্গ করে রাজপথে মিছিল বের করে। নিষ্ঠুর সরকার মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায়।
গুলিতে শহিদ হন, সালাম, বরকত, জব্বার, রফিক, শফিউরসহ
নাম না-জানা আরো অনেকে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি একদিকে শোকের
অন্যদিকে আত্মগৌরবের একটি দিন। ভাষা প্রতিষ্ঠার একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন রূপ নেয়
স্বাধীনতা আন্দোলনে। মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রামের পথ বেয়েই আমাদের
স্বাধীনতা আন্দোলন শক্তিশালী হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আন্দোলনের সফল
পরিণতি ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভু্যদয়ের মাধ্যমে। ২০০০ সাল থেকে
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে আসছি। বিশ্বের ১৯১টি দেশ ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে থাকে
মর্যাদার সঙ্গে। এ এক গৌরবময় ইতিহাস, যে শুধু
আমরাই বাংলা সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী, এই গর্ববোধ আমাদের দুই বাংলারই।
0 মন্তব্যসমূহ