Daringbari ওড়িশার শৈলশহর
দারিংবাড়ি শহর - অরণ্যের সমুদ্র, জলপ্রপাতের উচ্ছ্বাস, তিরতিরে বয়ে চলা নদী আর হিমেল হাওয়ার ছোঁয়া প্রকৃতি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে ওড়িশার এই শৈলশহরে। ওড়িশার দারিংবাড়ি খুব সুন্দর একটি হিল স্টেশন। সত্যিই ভাবলে অবাক লাগে ওড়িশার ভেতরই রয়েছে এমন একটি আশ্চর্যজনক জায়গা। তাই উইকেন্ডে এক চমৎকার ভ্রমণ পেতে ও বরফের মজা পেতে চাইলে পরবর্তী ডেস্টিনেশন হোক দারিংবাড়ি। তবে ভ্রমণ করার আগে দারিংবাড়ি যাওয়ার জন্য সমস্ত কিছু জেনে নিতে হবে। দু-তিনদিনের ছুটি থাকলে, অনায়াসে আপনার ডেস্টিনেশন হতে পারে ওড়িশার দারিংবাড়ি৷ যদি আপনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপিপাসু হন, তবে দারিংবাড়ি আপনার ভাল লাগতে বাধ্য৷ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ‘ওড়িশার কাশ্মীর’ দারিংবাড়ি। দারিংবাড়িকে ঘিরে আছে অসংখ্য জলপ্রপাত৷ বর্ষায় প্রপাতগুলি জলে ভরে ওঠে। প্রকৃতি কেমন যেন ঝলমল করে। এত ঝকঝকে আবহাওয়া ভাবাই যায় না।
![]() |
দারিংবাড়ি শহর । দারিংবাড়ি ভ্রমণ গাইড । Daringbari |
ডেস্টিনেশন যখন দারিংবাড়ি
কীভাবে যাবেনঃ বিশাখাপত্তনম থেকে ২৭৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত
দারিংবাড়ি৷ হাওড়া থেকে ভুবনেশ্বরগামী যে কোনও ট্রেনে যেতে পারেন। বারহামপুর
স্টেশনে নেমে যে কোনও গাড়িতেই পৌঁছে যাবেন দারিংবাড়ি। দূরত্ব মাত্র ১১৫ কিলোমিটার৷
ভুবনেশ্বর থেকে গাড়িতে করে দারিংবাড়ি যাওয়া সম্ভব৷ ভুবনেশ্বর থেকে দারিংবাড়ির দূরত্ব ২৫০ কিমি। ভুবনেশ্বর থেকে বাসে দারিংবাড়ি পৌঁছানো
যায়।
কলকাতাঃ কলকাতা থেকে আপনাকে ট্রেনে ভুবনেশ্বর যেতে
হবে। ভুবনেশ্বর থেকে বাসে বা ট্রেনে দারিংবাড়ি পৌঁছানো যায়।
দেশের অধিকাংশ
সুন্দর হিল স্টেশনের মতো এ শহরও সাহেবদের তৈরি। ইংরেজ আমলে এই অঞ্চলের দায়িত্ব
পেয়ে পাহাড়ি এলাকাটিতে থাকতে শুরু করেন দারিং সাহেব। তার পরে এক সময় তাঁর নাম
থেকেই জায়গাটার নাম হয়ে যায়। ‘বাড়ি’ মানে অবশ্য ঘর নয়, ওড়িয়া ভাষায় ‘বাড়ি’র অর্থ গ্রাম।
![]() |
দারিংবাড়ি শহর । দারিংবাড়ি ভ্রমণ গাইড । Daringbari |
ব্রহ্মপুর স্টেশন থেকে গাড়ি এগোল ৫৯ নং জাতীয় সড়ক ধরে। দূরের পাহাড় আস্তে আস্তে কাছে এল। পাক খেয়ে গাড়ি উঠতে লাগল। অতঃপর দারিংবাড়ি উদয়গিরি ফরেস্ট রেঞ্জ। এবং বিস্ময়। এ কি ওড়িশা? পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে রাস্তা উঠছে... গহীন বন, ঘন সবুজে কোথাও এতটুকু ফাঁক নেই। এমনকি বোধ হয় অল্টিচিউডের জন্যই সামান্য অস্বস্তিও হতে শুরু হল। এক সময়ে পাহাড়ের মাথায় পৌঁছলাম। রাস্তার দু’পাশে খোলা মাঠের মতো জায়গা। ফরেস্ট রেঞ্জের মূল এলাকায় ঢোকার গেট। কিছুটা যেতেই দারিংবাড়ি শহর।
![]() |
দারিংবাড়ি শহর । দারিংবাড়ি ভ্রমণ গাইড । Daringbari |
ছোট্ট শহর। একটা বাজার এলাকা, দুটো হোটেল, কিছু দোকান, একটা চার মাথার মোড়। সেখান থেকে ডান দিক ধরে কিছুটা এগোলে
শহরের কোলাহল পেরিয়ে রিসর্ট। বড় বড় গাছ আর ধাপে ধাপে কয়েকটা করে কটেজ। রিসর্ট
চত্বরে প্রচুর ফলের গাছ। যথেষ্ট আনাজপাতিও ফলেছে সেখানে।
কোথায় থাকবেন: দারিংবাড়িতে থাকার জন্য সরকারি বাংলো যেমন রয়েইছে, তেমনই রয়েছে বেসরকারি একাধিক হোটেল৷ বর্ষা বা শীতে গেলে আগাম বুকিং করে যাওয়াই ভাল৷ তবে বছরের অন্যান্য সময়ে গেলে থাকার সমস্যা হবে না৷
আবহাওয়াঃ গ্রীষ্মে
দারিংবাড়ির আবহাওয়া গ্রীষ্মমন্ডলীয় আবহাওয়া অনুভব করতে পারেন। তখন সম্ভবত
তাপমাত্রা ২৮ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতের তাপমাত্রা ১৫ থেকে ২২ থাকে।
বর্ষাকালে এখানে বৃষ্টি হয় এবং চারিদিক সবুজ রঙে পূর্ণ থাকে। এবং শীতকালে এখানে দারুন শীত পড়ে এবং এখানে ঘোরার আসল সময় এটি। ডিসেম্বর মাসে পারদ রাতের সময় ০ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে যায়। সকালের সময় আপনি ঘন কুয়াশা অনুভব করতে পারেন এবং মধ্যাহ্নে আপনি নীল আকাশ, সবুজ পরিবেশের অভিজ্ঞতা নিতে পারেন। আর আপনার ভাগ্য যদি ভালো থাকে বরফ পড়ার দৃশ্যও উপভোগ করতে পারেন।
খাবারঃ প্রাতঃরাশের জন্য রাস্তার পাশে কয়েকটি
ভোজনশালা রয়েছে। আপনি সেখান থেকে পুরী, ইডলি এবং উপমা খেতে
পারেন। মধ্যাহ্নভোজ ও রাতের খাবারের জন্য হিল ভিউতে ভালো রেস্তোঁরা রয়েছে।
দারিংবাড়ির আকর্ষণ:
১৷ হিল ভিউ পয়েন্ট: দারিংবাড়ি যাবেন আর হিল ভিউ পয়েন্ট যাবেন না, তা কি সম্ভব?
![]() |
দারিংবাড়ি শহর । দারিংবাড়ি ভ্রমণ গাইড । Daringbari |
![]() |
দারিংবাড়ি শহর । দারিংবাড়ি ভ্রমণ গাইড । Daringbari |
৩৷ দলুরি নদী: সমগ্র
দারিংবাড়ি পাহাড় জুড়ে অসংখ্য সুন্দর ঝরনা তৈরি করেছে দলুরি নদী।
![]() |
দারিংবাড়ি শহর । দারিংবাড়ি ভ্রমণ গাইড । Daringbari |
৪৷ পুদুডি জলপ্রপাত: ওড়িশা রাজ্যের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পুদুডি জলপ্রপাত। দারিংবাড়ি এসে এই জলপ্রপাতটি না দেখলে পুরো ট্যুরই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
৫৷ লাভার্স লেন: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা লাভার্স লেনের প্রেমে পড়তে আপনি বাধ্য৷ নদীর পাশে বসেই কাটাতে পারেন বেশ কিছুটা সময়৷ মন্দ লাগবে না৷
![]() |
দারিংবাড়ি শহর । দারিংবাড়ি ভ্রমণ গাইড । Daringbari |
৬৷ বেলঘর অভয়ারণ্য: ১৬,১৭৪,৪৬ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত বেলঘর অভয়ারণ্য। দারিংবাড়ি থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে। ঘন সবুজে ঢাকা এই জঙ্গলে প্রচুর বন্যপ্রাণীর সন্ধান মেলে, বিশেষ করে দাঁতাল হাতি। এছাড়াও অসংখ্য পাখী, বুনো শুয়োর, হরিণ দেখতে পাওয়া যায়। এই জঙ্গলের বনবাংলোটি আরেকটি আকর্ষণ পর্যটকদের কাছে।
দারিংবাড়ির মানুষও থাকেন প্রকৃতিকে নিয়ে। মূলত জনজাতি এলাকা। ছোট ছোট বাড়ি। সাজানো, গোছানো, পরিচ্ছন্ন। এক একটা গ্রামে অল্প অল্প ঘর। সামান্য লোকের বাস। চেঁচামেচি নেই। চোখের সঙ্গে কানও জুড়োয় এই শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশে, তাই বেড়ানোর আর্দশ ডেসটিনেশন হিসাবে আমরা বেছে নিতেই পারি দারিংবাড়ী শহরটিকে।
আরও পড়ুনঃ- মন্দারমণি
FAQ:-
প্রঃ দারিংবাড়ি ভ্রমণ
উঃ ওড়িশার দারিংবাড়ি খুব সুন্দর একটি হিল স্টেশন। অরণ্যের সমুদ্র, জলপ্রপাতের উচ্ছ্বাস, তিরতিরে বয়ে চলা নদী আর হিমেল হাওয়ার ছোঁয়া প্রকৃতি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে ওড়িশার এই শৈলশহরে। তাই উইকেন্ডে এক চমৎকার ভ্রমণ পেতে ও বরফের মজা পেতে চাইলে পরবর্তী ডেস্টিনেশন হোক দারিংবাড়ি।
প্রঃ দারিংবাড়ি ভ্রমণ খরচা
উঃ মাথা পিছু ভ্রমণ খরচা আপনার থাকা-খাওয়ার উপর নির্ভর করে, তবে সর্বনিম্ন ৬০০০/-টাকা - সর্বোচ্চ ১৫০০০/-টাকার মধ্যে।
প্রঃ দারিংবাড়ি হোটেল এবং ক্যাম্প
উঃ Utopia Resort, Hotel Crystal Crown, Shree Inn Talasari, Hotel Aether,
0 মন্তব্যসমূহ