শিশু মনস্তত্ব ও মানসিক বিকাশ
শিশু মনোবিজ্ঞান: শৈশব যে কোনও ব্যক্তির জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এই নিবন্ধে শিশু কালের সেই দিক গুলি নিয়েই আমরা আলোচনা করব। শিশু মনোবিজ্ঞান বা শিশু মনোস্তত্ত্ব হ'ল সেই শৃঙ্খলাবদ্ধ জ্ঞান লাভ যা একটি মায়ের গর্ভধারণ কাল থেকে শুরু করে সেই শিশুর কৈশোরকাল অর্থাৎ তার বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত তার সামাজিক ও মানসিক অবিচ্ছেদ্য বিকাশকে অধ্যয়ন করা।
![]() |
শিশু মনোবিজ্ঞান কি। শিশু মনোবিজ্ঞান | Child Psychology |
শিশুর মনোজগৎ এবং বড়দের জগতের মধ্যে একটা বিপরীতমুখী চিন্তার ভেদাভেদ আছে। শিশুরা সবসময়ই অনুকরণপ্রিয়, শিশুরা তার পরিবারের সকলকে অনুকরণ করে। তারা কী করছে, কীভাবে করছে-এগুলো দেখে, এবং শিখতে চেষ্টা করে। শিশুকালের যে অভিজ্ঞতা রয়েছে তা যৎ সামান্য তুচ্ছ মনে হলেও তা জীবনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে এবং শৈশব-র ব্যক্তিত্ব, যা তারা তাদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও সারা জীবন প্রভাবিত করে।
আরও পড়ুনঃ- হতাশা থেকে মুক্তির উপায়
আমরা বড়রা যদি
নিজেদের মনমত কোনও সিদ্ধান্ত শিশুর উপর চাপিয়ে দিতে যাই তা হলে সেটি জগতের
ভারসাম্য নষ্ট করবে। এই ভাবনাচিন্তার জগতের যে
স্তরগুলি রয়েছে তার দিকে নজর দিতে হবে। এখানে লক্ষ্যণীয়
বিষয় হলো, বাবা-মায়ের
সবসময়ের আদরের মাঝে থেকে শাসনটা তারা মেনে নিতে পারছে কিনা সেটা বোঝা, কিছু কিছু
বাচ্চারা ছোটবেলা থেকেই মেটামুটি আদর আর শাসনের ভারসাম্যের মাঝে থাকে। কিন্তু যারা শাসনের সাথে পরিচিত থাকেনা তাদের জন্য
ব্যাপারটা অন্যরূপ ধারণ করে বাবা মায়ের আদর-আবদারের মায়াজাল থেকে বেরিয়ে হঠাৎ কঠিন
শাসনের সম্মুখীন হলে তা তাদের মানসিকতায় গভীর থেকে গভীরতর প্রভাব ফেলতে পারে আর
তখনই ঘনিয়ে আসে বিপরীতমুখী মুহুর্তগুলি যা শিশুকে হয় রাগী একগুঁয়ে জেদী বাচ্চায়
পরিণত করে অথবা সে ভয়ে কুঁকড়ে গিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে। দুই ক্ষেত্রেই প্রভাব সেই সহজ
সরল অবুঝ শিশু মনের উপরই পড়ে।
![]() |
শিশু মনোবিজ্ঞান কি। শিশু মনোবিজ্ঞান | Child Psychology |
শিশুর বিকাশগুলিতকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগেবিভক্ত করা হয়েছে:
- শারীরিক বিকাশঃ স্থিতিশীল এবং অনুমানযোগ্য ক্রমগুলিতে ঘটে শারীরিক দেহে পরিবর্তন, তার সাথে সাথে মস্তিষ্কের সার্বিক ক্রমবিকাশ।
- সম্মিলিত উন্নতিঃ পরিবেশ সম্পর্কিত যেমন ভাষা, মানসিক চিন্তা-চেতনা, যুক্তি-প্রযুক্তি কল্পনা জ্ঞান
অর্জনের পর্যায়গুলিকে বোঝায়।
- সামাজিক-মানসিক বিকাশঃ সামাজিক এবং মানসিক বিকাশ একে অন্যের
সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। তা সে যেকোনো মানুষ বা জীব অথবা জড়
বস্তুর সাথে সম্পর্ক স্থাপন শিশু বিকাশের অংশ, অপরদিকে তার সংবেদনশীল অনুভূতিগুলি যথা
আবেগের প্রকাশ আত্মবিশ্বাস, ভয়, অহঙ্কার, বন্ধুত্ব এবং কৌতুক ইত্যাদি সামাজিক এবং মানসিক
বিকাশের-ই অংশ।
শিশুমনকে কখনও অধিক নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ করা উচিত নয়। তাকে কিছুটা সাবলম্বী ও স্বতন্ত্রভাবে বেড়ে উঠার স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। শুধু খেয়াল রাখা একান্ত ভাবে দরকার তার চারপাশে কারা আছে। কাদের কথা সে বেশি গ্রহণ করছে। কখনও কারও দ্বারা অধিক প্রভাবিত হচ্ছে কি না। এবং সেই সময়ে শিশুর আচরণগত কোন পরিবর্তন দেখলে অবশ্যই সচেতন হতে হবে, প্রথমেই তার সাথে কড়া শাসনের ভূমিকায় অবতীর্ণ না হয়ে তার কথা মনোযোগ সহকারে শুনতে ও তাকে বারংবার ঠিক ও ভুলের পার্থক্যটা বুঝিয়ে যেতে হবে।
পারিবারিক জীবনে বাবা-মায়ের মধ্যে
অশান্তির মতো ঘটনা একটি শিশুর উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। শিশুর লালন-পালনে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হচ্ছে-আপনার
নিজের আচরণ। আপনি যদি সন্তানের সামনে অন্যের সমালোচনা, দোষ নিয়ে কথা বলেন-তা হলে সেই শিশু একটু বড়
হলেই বাবা মায়ের কথাই মানতে চাইবে না। কারণ তখন তার বোঝার জায়গাটা স্বচ্ছ হবে যে, অন্যের সমালোচনা করতে হয়, স্বপ্লেই একে অপরকে
অন্যায় অযথাপূর্ণ ভাবে দোষারোপ করতে হয়, এবং তার বাবা মা (অভিভাবক) তার সামনে
শিশুকাল থেকেই এসবকিছু করে চলেছে। শিশুর
জন্মের পরই দায়িত্ব শুরু হয়ে যায়। বিষয়টা কিন্তু খুব সহজ নয়। ভীষণ কঠিন দায়িত্ব একটি
শিশুর সঠিক লালন পালন। শিশুর সামনে কখনো কোনোকিছু নিয়ে হা-হুতাশ, আফসোস করবেন না। শিশুকাল থেকেই তাকে এই
শিক্ষায় গড়ে তোলা উচিত যে, জীবনে
যা কিছু ঘটে তা মেনে নেওয়াই শ্রেয়। তবে
মনেপ্রাণে সবসময় সৎ চিন্তা করতে হবে, নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার কাজে দৃঢ় থাকতে হবে তা হলে নিজের
জীবনে সুনিশ্চিত ভাবেই ভালো কিছু হবে। এতে
করে ছোটবেলা থেকেই সে একটা ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠবে। মনে রাখতে হবে, শিশু তার বাবা মা তথা অভিবাবকের চলন-বলন,
আদব-কায়দা সবকিছুই অনুসরণ করবে।
![]() |
শিশু মনোবিজ্ঞান কি। শিশু মনোবিজ্ঞান | Child Psychology |
নিয়মিত শিক্ষা দানঃ
শিশুদের জন্য আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় প্রাথমিক স্তর থেকেই। প্রাথমিক স্তরে একজন শিক্ষার্থীর জন্য পাঠ্যক্রম নির্দিষ্ট থাকে। এ স্তরে একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞানার্জনের জন্য পাঠ্যক্রমের অন্তর্গত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। নিয়মিত শিক্ষায় অর্থাৎ বিদ্যালয়ে শ্রেণীর বিভিন্ন কর্মে অংশগ্রহণ ব্যতীত কোনোক্রমেই মেধা ও চিন্তাশক্তিকে জাগরণ সম্ভব নয়। আবার এই শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনার মুখ্য ভূমিকায় থাকেন একজন শিক্ষক। আবার শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রমে কিরূপ অগ্রগতি হচ্ছে তার খেয়াল রাখতে হবে শিশু-র বাবা মা (অভিভাবক) উভয় কেই।
শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন মেনে চলতে শিক্ষাদান :
সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই নিয়ম-শৃঙ্খলা
মেনে চলতে উৎসাহিত করুণ। বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে কঠিন মনে হলেও নিত্য অভ্যাসের
দরূণ শৃঙ্খলাবোধ শিশু মনে ধীরে ধীরে জায়গা করে নেবে। ফলস্বরূপ নিজের জীবনকে গুছিয়ে
নিয়ে, সে একটি সুন্দর ও পরিপাটি জীবন গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। সন্তানকে শিশুকাল থেকেই নীতিগত শিক্ষা দিন। কখনোই সন্তানকে কোনো প্রকার অন্যায় অসৎ
কার্মে উৎসাহ দেওয়া উচিত নয়। কারণ অন্যায়ের পরিণতি সবসময় খারাপ হয়।
প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষাদান :
বর্তমান যুগ ভীষণভাবেই
হয়ে উঠছে প্রযুক্তি নির্ভর, তাই এই বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন সকলের প্রয়োজন । তাই প্রযুক্তি সর্ম্পকে জানা
এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে প্রত্যেক নাগরিক তথা শিশু অভিভাবকের সুস্পষ্ট ধ্যাণধারণা
থাকা দরকার। প্রযুক্তির ভালোর সঙ্গে সঙ্গে ভীষণ ভীষণ খারাপ দিকও আছে সে কথা সব
সময়ই মাথায় রাখতে হবে।
আরও পড়ুনঃ- মানসিক অবসাদ
শিশুর মানসিক বিকাশ
শিশুকে লেখাপড়ার সাথে সাথে, খেলাধুলা
এবং সহ-পাঠ্যক্রমিক শিক্ষায়তেও সমান উৎসাহিত করতে হবে। তবেই সে দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়
নিয়ে সেই বিশেষ বিষয়ে বা ক্ষেত্রে সাফল্যের পথে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাবে।
![]() |
শিশু মনোবিজ্ঞান কি। শিশু মনোবিজ্ঞান | Child Psychology |
শিশুরাই দেশের তথা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ তাই আমাদের প্রত্যেকরই উচিত শিশু মনের বিশেষ চাহিদা আকাঙ্ক্ষাকে বোঝা এবং তার মানসিক চাহিদাগুলিকে সুস্থ-স্বাভাবিক দিকে প্রবাহিত করে এক জন সুস্থ নাগরিক গড়ে তোলা । তবেই আজকের একজন ছোট্ট শিশু আগামী দিনে দেশের দশের একজন হয়ে উঠতে সক্ষম হবে।
0 মন্তব্যসমূহ