দৈনন্দিন জীবনে পানীয় জলের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
আমরা সবাই জানি
আমাদের জীবনে জলের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আর তার সাথে আমরা এও জানি জলের ওপর নাম জীবন। আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় হল দৈনন্দিন জীবনে পানীয় জলের
গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। এই
পৃথিবীতে তিন ভাগ জল আর এক ভাগ স্থল। এই মোট জলভাগের প্রায় ৯৭ শতাংশ সমুদ্র ও মহাসাগরে
বন্দী। আর তিন শতাংশ জল অপেক্ষাকৃত মিষ্টি। এর মধ্যে আবার অধিকাংশটাই উত্তর ও
দক্ষিণ মেরুতে বরফ হিসেবে জমে রয়েছে। বলা বাহুল্য, মানুষের
ব্যবহার্য ও পানীয় জলের পরিমাণ নিতান্তই কম।
চিকিত্সকদের মতে, প্রতিদিন একজন প্রাপ্ত
বয়স্কের প্রায় ৮ গ্লাস জল পান করা উচিত। অধিকাংশ মানুষই জানেন না, সঠিক পরিমাণে জল পান না করলে শরীরের নানান সমস্যা তৈরি হতে পারে। আমাদের মধ্যে
অনেকে আছেন যাঁরা যতক্ষণ না তেষ্টা পাচ্ছে, ততক্ষণ জল পান করেন না । আর
এতেই শরীরের নানান সমস্যার সৃষ্টি হয়।
![]() |
পানীয় জলের গুরুত্ব । আয়ুর্বেদশাস্ত্র মেনে জল পান |
মানব দেহে জলের গুরুত্ব ঠিক কি কি ও কতখানি তা আলোচনা করা যাকঃ-
Ø হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে জলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পানীয় জলের মধ্যে যে খনিজগুলি থাকে, সেগুলি হজমক্ষমতা কাজে লাগিয়ে শরীরে পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে। খাবার খাওয়ার ঠিক ৩০ মিনিট আগে জল পান করলে খিদে বাড়ে, বিপাকের হার বৃদ্ধি ঘটে, শরীরে ক্যালোরি ক্ষয় হতে সাহায্য করে। প্রচুর পরিমাণে জল পান করলে ত্বক উজ্জ্বল ও পরিস্কার থাকে। বার্ধক্যের ছাপ পড়ে না,
![]() |
পানীয় জলের গুরুত্ব । আয়ুর্বেদশাস্ত্র মেনে জল পান |
ত্বকের নানান সমস্যা মেটাতে জলই একমাত্র সমাধান। প্রচুর পরিমাণে জল পান করলে ক্লান্তিভাব, হাইড্রেশন বা ব্রণর মতো সমস্যা দূর করা সম্ভব।
শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশই জল। হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি, রক্ত সঞ্চালন, মুখে লালা তৈরিতে, পুষ্টি অনুঘটক, শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখা- এই সব শারীরিক ক্রিয়াকলাপগুলি সচল রাখাতে জলের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য
(Urban Company Native M2 Water Purifier) দাম জানতে ক্লিক করুণ
Ø মানসিক দিক থেকেও জল
অত্যন্ত উপকারী। মস্তিষ্কে জল সরবরাহে ঘাটতি থাকলে ডিহাইড্রেশনের মতো মারাত্মক
সমস্যা তৈরি হয়। দেহে সোডিয়াম, ইলেক্ট্রোলাইট স্তরগুলিতে
প্রভাবিত করতে জলের ভূমিকা রয়েছে। উদ্বেগ, মাথাব্যথা, সাধারণ ক্লান্তির জন্যও একমাত্র সমাধান হল জল।
Ø পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান না
করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে পেশিশক্তি হ্রাস পায়। সারাদিন ক্লান্তিভাব থেকে
যায়। শরীরে তরলের ভারসাম্যরক্ষায় ঘাটতি শুরু হয়।
Ø কিডনির জন্য দরকার পর্যাপ্ত
পরিমাণে জল। আর সেই জলের যোগান আপনাকেই দিতে হবে। কিডনিতে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে জল
না থাকে, তাহলে কিডনিতে পাথর তৈরি হতে পারে। কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার
সম্ভাবনা প্রবল।
Ø বাতের ব্যাথা দূর করতে জলের
ভূমিকা অপরিহার্য। বাতের ব্যাথার জন্য পরিপূরক গ্লুকোসামাইন, কার্টিলেজ শরীর থেকে আরও জল শোষণে সহায়তা করে। তাই গাঁটে গাঁটে ব্যাথার উপশম
পেতে প্রচুর পরিমাণে জল খান।
আয়ুর্বেদ অনুসারে, সঠিক নিয়ম মেনে জল পান করুনঃ-
Ø
জল বসে পান করুন । আসলে এর একটি আয়ুর্বেদিক কারণ আছে। আয়ুর্বেদ
অনুসারে, দাঁড়িয়ে থাকা
অবস্থায় কিছু পান করা শরীরের তরলের ভারসাম্যকে ব্যাহত করতে পারে। যা জয়েন্টগুলিতে
অতিরিক্ত তরল জমা হতে পারে এবং আর্থ্রাইটিসের কারণ হতে পারে।
Ø জল চুমুক দিয়ে ধীরে ধীরে পান করুন, কখনই তাড়াহুড়ো করে জল গিলে পান করবেন না।
![]() |
পানীয় জলের গুরুত্ব। আয়ুর্বেদশাস্ত্র মেনে জল পান |
তাড়াহুড়ো করে জল পান করলে ফোলাভাব হতে পারে। অন্যদিকে চুমুক দিয়ে জল পান করলে তা হজমে সাহায্য করে। গিলে জল নয় চুমুক দিয়ে পান করুন।
Ø
সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে জল পান করুণ। এটি অন্ত্র পরিষ্কার করতে এবং আপনার শরীরকে ভালো ভাবে
হাইড্রেট করতে সহায়তা করবে।
Ø গ্রীষ্মেকালে ফ্রিজের ঠাণ্ডা জল সরাসরি পান করা এড়িয়ে
চলুন। শরীরে ঠাণ্ডা জলের ভারসাম্য বজায় রাখতে আপনি ঘরের তাপমাত্রায় জলের সাথে
ফ্রিজের ঠান্ডা জল মিশিয়ে পান করুন। শীতকালে,
সর্বদা ঘরের তাপমাত্রার জল বা গরম জল পান
করুন। ঠাণ্ডা জল হজমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।
অন্যদিকে গরম জল হজমে সহায়তা করতে পারে। এমনকি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য
করতে পারে।
Ø আয়ুর্বেদ মতে জল রাখার পাত্রটি অবশ্যই তামা বা রূপার পাত্র হতে হবে। তামা বা রূপার গ্লাসেও পান করলে ভালো হয়। রৌপ্য এবং তামা শরীরের দোষের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।.

আরও পড়ুনঃ দৈনন্দিন জীবনে ত্বকের যত্ন
জল পানের সঠিক সময়ঃ-
1) সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে জল পান করা। শরীরকে
ভালো ভাবে হাইড্রেট করতে সহায়তা করবে, শরীর থেকে বিষাক্ত পর্দাথ (টক্সিন) বের হতে সাহায্য করবে।
2) প্রাতঃরাশের ঠিক ৩০মিনিট – ১৫ মিনিট পূর্বে জল পান
করা। হজমের সুবিদার্থে।
3) স্নানের পূর্বে জল পান করা, স্নানের পূর্বে জল পান
করলে শরীরে রক্ত চাপের ভারসাম্যতা বজায় থাকে।
4) মধ্যাহ্ন ভোজনের ৩০মিনিট – ১৫ মিনিট পূর্বে জল পান
করা। খাবার সহজেই হজম হবে।
5) সন্ধ্যা নামার আগে ও পরে।
6) রাতের ভোজনের ৩০মিনিট – ১৫ মিনিট পূর্বে জল পান করা।
খাবার সহজেই হজম হবে।
7) ঘুমতে যাওয়ার ১০ মিনিট পূর্বে।
ভোজনের সময় বারংবার জল পান করা, ডাক্তারী মতে একেবারেই অস্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয়।
দৈনন্দিন জীবনে প্রতি দিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে আর
রাতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত নানা কাজে জলের ব্যবহার হয়। বলা বাহুল্য, মানুষের ব্যবহার্য ও পানীয় জলের পরিমাণ নিতান্তই কম।
আর এই সীমিত পরিমাণের মধ্যেই দিনের পর দিন জলের অপচয় হচ্ছে। যা ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে
এক কঠিন বাস্তবের মুখে দাঁড় করাতে চলেছে। আর এই পরিস্থিতি থেতে বাঁচতে হলে সবাইকে
এক হয়ে জল সংরক্ষণের পথে হাঁটতে হবে। এক্ষেত্রে শুরুটা করা যেতে পারে বাড়ি থেকেই।
তাই সবার আগে জলের অপচয় বন্ধ করতে হবে। দৈনন্দিন কাজ করতে গিয়ে রোজ যে পরিমাণ জল
নষ্ট হয়, সে দিকে নজর দিতে
হবে। তা হলে বাড়ি থেকেই এক মহৎ ও সুদূরপ্রসারী কর্মসূচির সূচনা হবে।
![]() |
পানীয় জলের গুরুত্ব। আয়ুর্বেদশাস্ত্র মেনে জল পান |
পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্রদেশের বিভিন্ন স্থানে যথাযথ পানীয় জলের সরবরাহের ওপর নজর রেখে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র
মোদী জল জীবন মিশন চালু করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ এই কর্মসূচি থেকে অনেকাংশেই লাভবান
হতে পারে। এই কর্মসূচির আওতায় সরকার ২০২৪ সালের মধ্যে প্রতিটি গ্রামীণ পরিবারে
ট্যাপের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহের লক্ষ্য নিয়েছে। সরকারের লক্ষ্যই হল দেশের
প্রতিটি প্রান্তের মানুষের কাছে পরিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া। এর জন্য জল
জীবন মিশনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
BRITA Flow Portable Water Filter
ভূগর্ভস্থ জলের অতিরিক্ত উত্তোলন এবং দ্রুত নগরায়নের ফলে
পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। এমনকি, বেশ কিছু জায়গায় জলের মান বিশেষত,
আর্সেনিক এবং ফ্লোরাইড-এর প্রভাবে
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি, রাজ্যের
খরাপ্রবণ অঞ্চলগুলিতে গ্রামীণ পরিবারগুলির কাছে অপরিশোধিত জল সরবরাহের ফলে নানা
সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের জন্য জল জীবন মিশন বাস্তবায়নে
বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার অনুমোদন করেছে। এ রাজ্যে ২০২৪ সালের মধ্যে সমস্ত পরিবারে
১০০ শতাংশ ট্যাপ সংযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এর জন্য রাজ্য সরকারের পূর্ণ
সহযোগিতাও আহ্বান করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ১ কোটি ৬৩ লক্ষ গ্রামীণ পরিবারের মধ্যে এ
পর্যন্ত মাত্র ২ লক্ষ ১৯ হাজার পরিবারকে ট্যাপ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
![]() |
পানীয় জলের গুরুত্ব। আয়ুর্বেদশাস্ত্র মেনে জল পান |
সবশেষে বলা যেতে পারে, যাতে প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য
পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা করা যায়, সেই লক্ষ্যেই কাঙ্ক্ষিত রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে এই
কর্মসূচি অভিযানের মাধ্যমে। সংশ্লিষ্ট সংস্থার আবেদন, এই মহৎ উদ্যোগের অংশ হোক দেশবাসী। সবার লক্ষ্য হবে একটাই, জলের অপচয় বন্ধ করতে হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধির
মানোন্নয়ন করতে হবে।
FAQ:-
প্রঃ- পানীয় জলের মূল উৎস কি?
উঃ- পানীয় জলের মূল উৎস কিন্তু মাত্র দুটি ১) নদীর জল, ২) ভূ-গর্ভস্থ জল, ৩) বর্তমানে বৃষ্টির জলকে রিফাইং ও পিউরিফাইং করে কাজে লাগানো চেষ্টা চলছে। এবং বর্তমানে ভারতবর্ষের বেশ কিছু রাজ্যে এই ভাবেই বৃষ্টির জলকে পরিশোধিত করে পান করা হয়।
প্রঃ- পানীয় জল জীবাণূ মুক্ত করতে কি মেশানো হয়?
উঃ পানীয় জল জীবাণূ মুক্ত করতে ক্লোরিন মেশানো হয়।
প্রঃ- পানীয় জলের অপচয়
উঃ- দিনে দিনে পরিশ্রুত পানীয় জলের চাহিদা বাড়ছে। তবে সেই সঙ্গে জল অপচয়ের অভিযোগও বাড়ছে।
প্রতিদিন প্রায় ৪৮৮ মিলিয়ন গ্যালন পরিশ্রুত পানীয় জল কলকাতার বিভিন্ন অংশে পৌঁছায়। তবে এই পরিমাণ কী চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট? ওয়াটার রিসোর্স বিশেষজ্ঞদের মতে, কলকাতার দৈনিক চাহিদা মেটাতে ২৫০ মিলিয়ন গ্যালন জলই যথেষ্ট। অপচয় রুখতে পাইপের মাধ্যমে জল সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে জলের কল বসানোর কাজ শুরু হবে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে ওই কল ভাঙা হয়। এতে জল অপচয় বেশি হয়।’৫) কাপড় কাচা বা বাসন ধোয়ার সময় অহেতুক বেশী পরিমাণ জল খরচা না করা।
0 মন্তব্যসমূহ