Banner

মন্দারমণি সি বিচ। মন্দারমণি কোথায়। Mandarmani Trip

দু-দিনের ছুটিতে ভ্রমণের সেরা ঠিকানা "মন্দারমণি" 

মন্দারমণি সি বিচ - এক কিংবা দুই রাত কোন সমুদ্র সৈকতে ছুটি কাটানোর জন্য কোলকাতা থেকে মাত্র ১৫০ কি.মি দূরত্বে অবস্থিত মন্দারমণি বর্তমানে ভ্রমণের সেরা ঠিকানা। মাত্র ৪ ঘন্টার মধ্যে খুব সহজেই মন্দারমণি সি বিচ পৌঁছানো যায়। মানুষের অতি ব্যস্ততম জীবনে একটু মুক্তির স্বাদ পেতে উইকএন্ড এ ছুটি কাটানোর আদর্শ একটি জায়গা হয়ে উঠেছে। মাছভাজা, কাঁকড়া খেতে খেতে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে ২ দিন কিভাবে অতিক্রান্ত হয়ে যায় তা টের পাওয়াই মুশকিল। দীঘার থেকে অনেকাংশে নিরিবিলি এই সমুদ্র সৈকতে একটু নীল নির্জনে সমুদ্র দর্শন বা সমুদ্র স্নান করা, বালির উপর দিয়ে লাল কাঁকড়া সাথে তাল মিলিয়ে হেটেঁ চলা, মানুষ কাছে এখানে খুবই উপভোগ্য।

মন্দারমণি সি বিচ। মন্দারমণি কোথায়। Mandarmani Trip
মন্দারমণি সি বিচ। মন্দারমণি কোথায়। Mandarmani Trip

মন্দারমণি কোথায় ও কেন বিখ্যাতঃ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বঙ্গোপসাগর উপকূলের অবস্থিত মন্দারমণি। কলকাতা এবং হাওড়ার সঙ্গে জাতীয় সড়কের মাধ্যমে মন্দারমণি জায়গাটি যুক্ত। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে এই জায়গাটি ১৮০ কিলোমিটার দূরে।

মন্দারমণি পশ্চিমবঙ্গের 

মন্দারমণি সি বিচ। মন্দারমণি কোথায়। Mandarmani Trip
মন্দারমণি সি বিচ। মন্দারমণি কোথায়। Mandarmani Trip
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সমুদ্র উপকূলের একটি বিশেষ পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠছে। এটি বঙ্গোপসাগরের উত্তরপ্রান্তের পশ্চিমবঙ্গের সব থেকে বড় সমুদ্র উপকূলবর্তী জায়গা। মোহনায় হল এখানের প্রধান আকর্ষণ। মন্দারমনির সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় মন ভরিয়ে দেয়। নিরিবিলিতে ছুটি কাটানোর সব থেকে সুন্দর ভ্রমণ গন্তব্য হল মন্দারমণি।



প্রায় ১০ বর্গমাইল জুড়ে এই জায়গাটি অবস্থিত পাশাপাশি খুব শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং আরামদায়ক। তবে মন্দারমণি সমুদ্র ঢেউ দীঘার চেয়ে ছোট। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরণের মার্কেট। সকালে প্রচুর জেলেরা মাছ ধরে এবং সেই দৃশ্য অপূর্ব। এখানে সুবিশাল ড্রাইভিং বিচ পর্যাটকদের মন কাড়ে। পাশাপাশি বোটিং এর সুবিধাও পাবেন তবে মাথায় রাখতে হবে এটি ঝুঁকিপূর্ণ

মন্দারমণি সি বিচ। মন্দারমণি কোথায়। Mandarmani Trip
মন্দারমণি সি বিচ। মন্দারমণি কোথায়। Mandarmani Trip

এখানে রাস্তার পাশে রয়েছে কৃত্রিম ভাবে তৈরী বিশ্ব বাংলার গ্লোব যা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। সমুদ্র সৈকতে যাবার রাস্তার দু পাশে বাজারও পাবেন। মাত্র ২০ বছরের মধ্যে এই সমুদ্র সৈকত হয়ে উঠেছে পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণের জায়গা। পর্যটকরা গভীর সমুদ্রে যাতে চলে না যায় তার জন্য রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার।

আরও পড়ুনঃ পুরী ভ্রমণ

মন্দারমণি নামের ইতিকথাঃ

মন্দারমণি জায়গাটির নামকরণের পিছনে রয়েছে একটি কারণ। প্রথমদিকে এই জায়গার নাম ছিল মন্দারবনি এবং পরবর্তীকালে মদার মণি হিসাবে পরিচিত হয়েছিল। বর্তমানে এই জায়গাটির নাম মন্দারমণি।

মন্দারমণি যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ

কলকাতা থেকে মন্দারমণি যাওয়ার সরাসরি ট্রেন নেই। কলকাতা থেকে ট্রেনে যেতে চাইলে মন্দারমণির সব থেকে কাছের রেল স্টেশন হলো দিঘা বা কাঁথি। হাওড়া স্টেশন থেকে কয়েক ঘন্টা ছাড়া ছাড়া কাঁথি বা দিঘা যাবার ট্রেনগুলি পাওয়া  এবং সেখান থেকে প্রাইভেট গাড়িতে করে মন্দারমণি পৌঁছাতে পারবেন। কাঁথি থেকে মন্দারমণির দূরত্ব পড়বে মাত্র ২১ কিমি।

মন্দারমণি সি বিচ। মন্দারমণি কোথায়। Mandarmani Trip
মন্দারমণি সি বিচ। মন্দারমণি কোথায়। Mandarmani Trip

WBTC বা যেকোনো প্রাইভেট বাসে মন্দারমণি যেতে হলে চাউলখোলা, চাউলখোলা থেকে অটো ভাড়া করলেই পৌঁছে যাবেন মন্দারমণি। কলকাতা থেকে কাঁথি যাওয়ার জন্য অনেক বাস রয়েছে। কাঁথি থেকে মন্দারমণি চলে আসতে পারবেন। এছাড়াও কয়েকটি বাস রয়েছে যা সরাসরি মন্দারমণি আসে।

কলকাতা থেকে মন্দারমনির সড়ক পথের দূরত্ব প্রায় ১৭০ কিমি, এবং সময় লাগে প্রায় ৫ ঘন্টা। বিদ্যাসাগর সেতু দিয়ে প্রথমে NH-১৬ ধরে কোলাঘাট। সেখান থেকে NH-১৬ হয়ে নন্দকুমার। তারপর দিঘা যাবার রোডেই পড়বে চাউলখোলা। চাউলখোলা বাস স্ট্যান্ডএ এসে মেইন্ রোড দিয়ে চললেই মন্দারমণি পৌঁছে যাবেন। চাউলখোলা থেকে মাত্র ১২ কিমি রাস্তা মন্দারমনির সমুদ্র সৈকত

আরও পড়ুনঃ গোয়া ভ্রমণ

দাম জানতে ক্লিক করুণ


মন্দারমণি থেকে ঘোরার জায়গাঃ

মন্দারমনিতে, মন্দারমনি বিচ ছাড়াও আরো অনেক ঘোরার জায়গা আছে।

দীঘাঃ মন্দারমণি থেকে আসার পথে আপনি দীঘার সমুদ্র সৈকত উপভোগ করে আসতে পারবেন। দীঘা যেতে কয়েক কিলোমিটার দূরেই মন্দারমণি। দীঘার সমুদ্রের ঢেউ মন্দারমণি থেকে বেশি। এছাড়া দীঘার সমুদ্রের সৌন্দর্যের কথা নতুন করে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে নাতাই আপনি যদি দীঘা সমুদ্রের মজা উপভোগ করতে চান এখানে ঘুরে আসতেই পারেন।

তাজপুর সমুদ্র সৈকত: মন্দারমণি বিচ থেকে আসতে সময় লাগে ১ ঘটার মতো।

চাঁদপুর সমুদ্রতট: মন্দারমণি বিচ থেকে সরাসরি চাঁদপুর আসা যায় না। নিজস্ব বা ভাড়ার গাড়িতেই আসতে হয়। বিচের চারপাশে লাল কাঁকড়ার দলকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। শান্ত নির্জন বিচ আপনার মন ভরিয়ে দেবে।

জুনপুট সমুদ্র সৈকত: জুনপুট মন্দারমণি থেকে মাত্র ৪৫ মিনিটের রাস্তা।

মন্দারমণি সি বিচ। মন্দারমণি কোথায়। Mandarmani Trip
মন্দারমণি সি বিচ। মন্দারমণি কোথায়। Mandarmani Trip
লাল কাঁকড়া বিচ: মন্দারমণি বিচ থেকে মাত্র ৮ মিনিটের দূরত্বে পেয়ে যাবেন আর একটি বিচ। যার নাম লাল কাঁকড়া বিচ। লাল কাঁকড়া বিচ হল মন্দারমনির ব-দ্বীপ, যেখানে নদী বঙ্গোপসাগরে মিশেছে।

লাইট হাউস: মন্দারমণি থেকে ঘুরে আসতে পারেন দরিয়াপুর লাইট হাউস। যেতে সময় লাগে ১ঘন্টার মতো। পথেই পেয়ে যাবেন বঙ্কিম চন্দ্র চ্যাটার্জীর লেখা কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের সেই বিখ্যাত মন্দির। কপালকুণ্ডলা মন্দির।

মন্দারমণিতে থাকা ও খাওয়ার জায়গাঃ

মন্দারমণিতে থাকার জন্য আপনি অনেক রিসর্ট, হোটেল পেয়ে যাবেনসোনার বাংলা হোটেল, সান বিচ রিসর্ট, হোটেল সোনার গাঁও, হোটেল তরঙ্গমালা গেস্ট হাউস, রেসর্ট ভিক্টোরিয়া বিচ, গোল্ডেন বিচ রিসোর্ট, লিভ সী ভ্যালী রিসোর্ট এছাড়াও আরও অনেক রিসর্ট ও হোটেল। হোটেল গুলি সমুদ্রের কাছাকাছি রয়েছে। 

মন্দারমণি সি বিচ। মন্দারমণি কোথায়। Mandarmani Trip
মন্দারমণি সি বিচ। মন্দারমণি কোথায়। Mandarmani Trip

মন্দারমণির হোটেল গুলি দীঘার মতো ঘিঞ্জি নয়, প্রায় প্রতিটি রির্সোটেই রয়েছে নিজস্ব সী বিচ। তাই এখানে হোটেল বা রির্সোটের ভাড়াও একটু বেশী, প্রায় প্রতিদিনের গড়ে ভাড়া পড়ে ২০০০/- টাকা থেকে ৮০০০/- টাকা পর্যন্ত।

মন্দারমণি সি বিচ। মন্দারমণি কোথায়। Mandarmani Trip
মন্দারমণি সি বিচ। মন্দারমণি কোথায়। Mandarmani Trip

আরও পড়ুনঃ ওড়িষ্যার দারিংবাড়ী ভ্রমণ

দাম জানতে ক্লিক করুণ


মন্দারমণিতে হোটেল বা রির্সোট ছাড়াও আপানারা বাইরে পেয়ে যাবেন প্রচুর খাবার হোটেল যা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নও বটে, বলা বাহুল্য সেই সব জায়গায় খাবার মূল্যও তুলনামূলক অনেকটা কম এবং খাবারও যথেষ্ট সুস্বাদু। বাঙালি খাবার আইটেমের পাশাপাশি আপনি পেয়ে যাবেন চাইনিজ ফুড। এখানে সবচেয়ে চাহিদা মাছের। ভিন্ন প্রকারের মাছের আইটেম পাওয়া যায়। আবার কোন কোন হোটেলে উত্তর এবং দক্ষিণ ভারতীয় খাবার পাওয়া যায়। তবে এখানে থাকার হোটেল বা রির্সোটে রুম ভাড়ার পাশাপাশি  খাবারের দামও একটু বেশি।

মন্দারমণি সি বিচ। মন্দারমণি কোথায়। Mandarmani Trip
মন্দারমণি সি বিচ। মন্দারমণি কোথায়। Mandarmani Trip

যারা সমুদ্র ভালোবাসেন দু-এক দিনের ছূটি পেলে অবশ্যই ঘুরে আসতে পারেন বাংলার জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত মন্দারমণি। খুব কম সময়ের জন্য নিরিবিলি শান্ত পরিবেশে ছুটি কাটানোর আদর্শ জায়গা হলো মন্দারমণি সি বিচ।

FAQ:

প্রঃ মন্দারমণি কেন বিখ্যাত?

উঃ কোলকাতা থেকে মাত্র ৪-৫ ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত মন্দারমণি, দীঘার থেকে অনেকাংশে নিরিবিলি এই সমুদ্র সৈকত, নীল নির্জনে সমুদ্র দর্শন বা সমুদ্র স্নান করা, বালির উপর দিয়ে লাল কাঁকড়া সাথে তাল মিলিয়ে হেটেঁ চলা, মানুষ কাছে এখানে খুবই উপভোগ্য।  

প্রঃ  মন্দারমণি ভ্রমণের আর্দশ সময় কখন?

উঃ মন্দারমণি ভ্রমণের আর্দ‌শ সময় হল সেপ্টম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। তবে বর্তমানে এখানে সারা বছরই পর্য‌টকদের আনাগোনা লেগেই থাকে।

প্রঃ মন্দারমণি ভ্রমণের খরচ কেমন?

উঃ মন্দারমণি খরচ দিঘার চেয়ে বেশি। হোটেল ভাড়া ব্যয়বহুল। দুদিনের ভ্রমণে মাথা পিছু এখানে সর্বনিম্ন খরচ পড়বে আনুমানিক ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকার মত।   

প্রঃ মন্দারমণি কোথায় অবস্থিত?
উঃ ভারতেবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বঙ্গোপসাগর উপকূলের অবস্থিত মন্দারমণি।

প্রঃ মন্দারমণি আর দিঘা কি একই?
উঃ না, দিঘা থেকে ১৬ কিমি আগে চাউলখোলায় নেমে ভাড়া গাড়িতে বা ট্রেকারে অথবা টোটোতে ৪ কিমি দূরে অবস্থিত মন্দারমণি। 
দীঘার থেকে অনেকাংশে নিরিবিলি এই সমুদ্র সৈকত। 
মন্দারমণির হোটেল গুলি দীঘার মতো ঘিঞ্জি নয়, প্রায় প্রতিটি রির্সোটেই রয়েছে নিজস্ব সী বিচ।
দীঘার সমুদ্রের ঢেউ মন্দারমণি থেকে অনেক বেশি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ