দৈনন্দিন জীবনে হার্ট বা হৃদপিন্ডের যত্ন
হার্ট ভালো রাখার উপায় গুলি কি কি এই নিবন্ধেের আলোচ্য বিষয়। হার্ট বা হৃদপিন্ড মানব শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ । এই হার্টের বা হৃদয় অথবা হৃদপিন্ড যত্ন না নিলেই ঘটে যাবে সর্বনাশ। হার্ট সম্পর্কে একটু আধটু কথা জানা থাকলেও, কিভাবে সচেতন হতে হবে তা আমরা অনেকেরই অজানা, ।
![]() |
হার্ট ভালো রাখার উপায় । Healthy Heart Care Tips |
বুকের ভেতর যে মসৃণ পেশি পৌনঃপুনিক ছান্দিক সংকোচনের
মাধ্যমে আপনার সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে চলেছে, সেই অঙ্গটি হচ্ছে হার্ট। একটু সচেতনতা
থাকলেই কিন্তু হার্টকে সুস্থ-সবল রাখা যায়, হার্ট অ্যাটেকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো
যায় আর এ জন্য রয়েছে বেশ সহজ কিছু উপায়। মাত্র কয়েকটি সহজ নিয়ম মেনে চললেই ভালো
থাকবে হার্ট।
Ø
সময়মতো খাওয়া-দাওয়া না করা,
Ø
পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের অভাব,
Ø
অকারণে অতিরিক্ত টেনশ্ন করা,
Ø
অতিরিক্ত চাপ নেওয়া,
Ø
অতিরিক্ত ধূমপান অথবা মদ্যপান
ইত্যাদি সব কারণে হার্টের সমস্যা হয়ে থাকে। এবার তাহলে ঘরোয়া উপায়ে হার্ট ভালো রাখার উপায়
সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, খাদ্যাভ্যাসে মাত্র পাঁচটি পরিবর্তন এনে হৃদরোগ ও স্ট্রোক থেকে আমরা নিজেদের
রক্ষা করতে পারি। এক পরিসংখ্যান বলছে, মানুষের যতো অকাল মৃত্যু
হয় তার অন্তত চার ভাগের এক ভাগের মৃত্যুর জন্যে দায়ী হৃদরোগ।
দৈনন্দিন জীবনে এ কয়টি অভ্যাস আপনার হৃৎপিণ্ডকে রাখবে
সুস্থ-সবল। দেখে মনে হতে পারে, আরে এসব মেনে চলা খুবই সহজ সাধ্য ব্যাপার কিন্তু বাস্তব
জীবনে ব্যাপারটা এত সহজও মোটেই নয়।
রোজকার জীবনে নতুন কোনো কিছুর সঙ্গে মানিয়ে
নেওয়া যেখানে কঠিন ব্যাপার, সেখানে একসঙ্গে এতগুলো অভ্যাসের পরিবর্তনে একটুতো সমস্যা হওয়ার-ই কথা । তবে
সমস্যা থাকলে তার সমাধানও থাকবেই। দৈনন্দিন জীবনে নানা কৌশলে আপনি এসব অভ্যাস গড়ে
তুলতে পারেন খুব সহজেই।
Digital Blood Pressure Monitor দাম জানতে ক্লিক করুণ
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন ভাল হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য প্রতি সপ্তাহে
কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি ব্যায়াম বা ৭৫ মিনিট জোরালো ব্যায়াম করার পরামর্শ দেয়।
কিন্তু ব্যায়ামের অভ্যাস না থাকলে হুট করে শারীরিক
কসরতের মাধ্যমে ঘাম ঝরানো ভীষণ ক্লান্তিকর ব্যাপার। এ কারণে বাড়িতে ছোটো বাচ্চা
থাকলে তাঁদের সঙ্গে খেলার মধ্য দিয়ে ব্যায়ামের কাজটা সেরে নিতে পারেন। সেটা হতে
পারে কায়িক পরিশ্রমের যেকোনো খেলা।
বাচ্চাকাচ্চা না থাকলেও সমস্যা নেই। একটু
হাঁটা কিংবা সাংসারিক কাজের মধ্য দিয়ে ব্যায়ামের রুটিন সেরে নিতে পারেন। প্রতিদিন
৩০ মিনিট ব্যায়াম মানে যে টানা আধঘণ্টা ব্যায়াম করতে হবে,
সেটা কিন্তু নয়। এ সময়টাকে ভেঙে নিতে পারেন।
সকালে ১০ মিনিট ঘাম ঝরালেন, বিকেলে কিংবা রাতে এ রকম আরও কিছু কাজ দিয়ে ব্যায়াম সেরে নিতে পারেন।
![]() |
হার্ট ভালো রাখার উপায় । Healthy Heart Care Tips |
ধূমপানকারীদের ক্ষেত্রে, ধূমপানের অপকারী দিকগুলো নিয়ে
ভাবুন। ধূমাপান ছাড়ার উপকারী দিকগুলোতে মনোযোগী হতে পারেন। ধূমপায়ী বন্ধুদের সঙ্গ
ত্যাগ করাই শ্রেয়। মদ্যপান এড়িয়ে চলুন। এটা ধূমপানে আপনাকে আরও আকৃষ্ট করবে। ধূমপানের
অপকারিতা সমন্ধে আমরা সবাই জানি। এ বদভ্যাসটি ছাড়ার নির্দিষ্ট কোনো পথ নেই। যে
যার মতো করে চেষ্টা করে থাকি।
![]() |
হার্ট ভালো রাখার উপায় । Healthy Heart Care Tips |
যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ আছে সেসব খাবার
খাবেন। এসব খাবারের কারণে শরীরে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়। কোলেস্টেরলের
মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে সাহায্য করে এই ব্যাকটেরিয়া।
বেশি আঁশযুক্ত সবজির মধ্যে রয়েছে শিম ও মটরশুঁটি জাতীয়
সবজি, কলাই ও
ডাল জাতীয় শস্য এবং ফলমূল। আলু এবং শেকড় জাতীয় সবজি খোসাসহ রান্না করলে সেগুলো
থেকেও প্রচুর আঁশ পাওয়া যায়। হোলগ্রেইন আটার রুটি এবং বাদামী চাল খাবারও পরামর্শ
দিচ্ছেন পুষ্টিবিদগণ (Nutritionist)।
আপনি প্রাণীজ উৎস থেকে প্রাপ্ত ‘স্যাচুরেটেড
ফ্যাট’ (ক্ষতিসাধক
স্নেহ পদার্থ) খেতে ভালোবাসেন। যেমন ধরুন, ‘রেড মিট’ কিংবা পূর্ণমাত্রায় ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত দ্রব্যাদি। হার্ট
ভালো রাখতে এসব খাবার ছাড়তে হবে। অভ্যাসটা ধীরে ধীরে পাল্টান। খাবারে লবণের
পরিমাণ কমান। প্রক্রিয়াজাত কিংবা প্যাকেটজাত খাবার কম খান।
ভালো করে রান্না করলে শাকসবজি খেতে কিন্তু দারুণ লাগে। শাকসবজি খান প্রতিদিন
দুই থেকে আড়াই কাপ, সঙ্গে
থাকুক ফলমূল। শস্যদানা বা ‘গ্রেইন’যুক্ত খাবার
খেতে পারেন, যেমন
বাদামি চাল, বার্লি, পপকর্ন, ওটমিল, গমের রুটি, গমের প্যানকেক
ইত্যাদি।
![]() |
হার্ট ভালো রাখার উপায় । Healthy Heart Care Tips |
রান্নায় খাবার তেল
হিসেবে সরিষার তেল, সয়াবিন ও অলিভ ওয়েল অল্প পরিমাণে ব্যবহার করতে পারেন। খাবারে সালাদ ও ডাল এবং
কাজু বাদাম অল্প পরিমাণে রাখতে পারলে ভালো। এছাড়াও সকালের প্রাতঃরাশ (Breakfast) বা দুপুরে খাবারের পর মৌসুমি ফল
খেলেও বেশ উপকার পাওয়া যায়। যেসব খাবারে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ বেশি থাকে
সেগুলো আমাদেরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।শুধু তাই নয়, এসব খাবার
হৃদরোগের ঝুঁকিও কমিয়ে দেয়।ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়ামের মতো খনিজ উচ্চ রক্তচাপ
প্রতিরোধ করে। হৃদরোগের যেসব কারণ আছে সেগুলো ঠেকাতেও এসব খনিজ ইতিবাচক প্রভাব
রাখতে পারে। অনেক
খাদ্য বিশেষজ্ঞ মনে করেন,
স্বাস্থ্যকর ও ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েটের মাধ্যমেই এসব ভিটামিন ও খনিজ পাওয়া
সম্ভব।
বেশি মোটা হলে ক্যালরি
কমিয়ে দিন মনে রাখতে হবে মোটা হলে
তা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ
করা সম্ভব। কারণ
আপনি যদি চিনি, লবণ,
স্যাচুরেটেড চর্বিযুক্ত খাবার কম খান,
ভিটামিন ও মিনারেল আছে এরকম খাবার বেশি
খান তাহলে আবার মোটা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কম।
Health Sense Smart Bluetooth Weight Machine for Body Weight
![]() |
হার্ট ভালো রাখার উপায় । Healthy Heart Care Tips |
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা আপনার হার্টের স্বাস্থ্যের ক্ষতি
করতে পারে। বসে থাকার মধ্যে কম্পিউটারে কাজ করা, টেলিভিশন দেখা
বা পড়ার মতো বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থকতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে অলস
জীবনযাপন হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই টানা ২ঘন্টা বসে কাজ করার পর একটু সেই কাজ
থেকে বিরত থাকুন, হাঁটা হাঁটি করুণ, শরীরকে সচল রাখুন।
![]() |
হার্ট ভালো রাখার উপায় । Healthy Heart Care Tips |
![]() |
হার্ট ভালো রাখার উপায় । Healthy Heart Care Tips |
হৃৎপিণ্ড শরীরের অনেক কাজের সাথে জড়িত। আপনি শুনে অবাক হতে পারেন যে দাঁতের
দুর্বল যত্ন আপনার হার্টের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। গবেষণায় দেখা যায় যে মাড়ির
রোগকে দূরে রাখা শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়াকেও কমিয়ে দেয়।
আপনি হয়তো ইতিমধ্যেই জানেন যে
সঙ্গীত শোনা আপনাকে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু আপনি কি জানেন যে ধীর গতির সঙ্গীত আপনার রক্তচাপ
কমাতে সহায়ককারী।
হার্ট ভালো রাখতে শারিরীক কসরৎ বা যোগব্যায়ম করতে পারেনঃ-
সিঁড়ি ব্যবহার- এবার অফিসে আসার জন্য লিফ্ট ছেড়ে সিঁড়ি ব্যবহার করুন। এতে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ হার্টের গতি বাড়ে। রক্ত চলাচল আরও গতিশীল হয়।
রোজ সকালে উঠুন। সকালে ব্যস্ত থাকলে বিকেলেও অ্যারোবিক ব্যায়াম করতে পারেন। দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, ক্লাসিক্যাল অথবা ওয়েস্টার্ন ড্যান্স বা জগিং করুন নিয়মিত।
(Wise Life Blue Grey Pro Yoga Blocks + Yoga Belt | Yoga Bricks) দাম জানতে ক্লিক করুণ
বীরভদ্রাসনঃ
বীরভদ্রাসন করার পদ্ধতিঃ
· প্রথমে ব্যায়াম করার ম্যাটে সোজা হয়ে দাঁড়ান। দুটি পায়ের মাঝে ৪ ইঞ্চ ফাঁক
রেখে।
· ডানদিকের হাঁটু ৯০ ডিগ্রি কোন করে ডানদিকে ভাঁজ করুন। একইভাবে বামদিকের পা
বামদিকে নিয়ে যান।
· মেরুদণ্ড সোজা রেখে হাত দুটি উপরের দিকে তুলে দিন ঠিক যেমন দেখতে পারছেন।
এইভাবে নিয়মিত ৩০ থেকে ৬০ সেকেন্ড এই ব্যায়াম অনুশীলন করুন। নিয়মিত ২০-৩০ সেকেন্ড।
উত্কটাসনঃ
উত্কটাসন করার নিয়মঃ
· প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়ান।
· এবার হাত দুটি খাঁড়া ভাবে উপরে মাথার দুপাশে উপরে রাখুন যেমন ছবিতে রয়েছে।
· এবার মেরুদণ্ড সোজা রেখে চেয়ারে বসার মতো পোজ করুন। খেয়ার রাখবেন বুক যেন
ঝুঁকে না যায়। মেরুদণ্ড সোজা রেখে পা দুটি ভাঁজ করে চেয়ার বসার মতো পোজে ৩০ থেকে
৬০ সেকেন্ড থাকুন। নিয়মিত ২০-৩০ সেকেন্ড।
বৃক্ষাসনঃ
বৃক্ষাসন করার নিয়মঃ
· একটি ম্যাটে সোজা হয়ে দাঁড়ান।
· এবার হাত দুটি প্রথমে বুকের কাছে নিয়ে আসুন এবং হাতের তালু দুটি নমস্কার ভঙ্গিতে
রাখুন। (যেমন ছবিতে রয়েছে)
· এবার ধীরে ধীরে নমস্কার ভঙ্গিতে হাত দুটি মাথার উপরের দিকে রাখুন।
· এবার ডান পা মাটি থেকে উঠিয়ে বা পায়ের উরুর উপর রাখুন। আপনার ডান পায়ের পাতা
যেন বাঁ পায়ের উরুর সঙ্গে লেগে থাকে।
· সোজাভাবে তাকিয়ে থাকুন কিছুক্ষণ। এইভাবে ২০ সেকেন্ড ব্যায়ামটি করুন। তবে একটু
বিশ্রাম নিয়ে অনুরুপ ভাবে বাঁ পায় তালু ডান পায়ের উরুতে রাখবেন। নিয়মিত ১৫ -২০ সেকেন্ড।
FAQ:-
প্রঃ- হার্ট ভালো থাকে কি খেলে
উঃ- বীজ ও বিভিন্ন ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন শাক-সব্জি, মৌসুমি ফল। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা থাকে ছোটো ও সামুদ্রিক মাছে কিছু চর্বিযুক্ত মাছেও থাকে ওমেগা-৩। বেরী জাতীয় ফল ও বেরী জাতীয় খাবার যেমন ফ্ল্যাক্স্সিড প্রভৃতি।
প্রঃ- হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার
উঃ প্রাণীজ উৎস থেকে প্রাপ্ত ‘স্যাচুরেটেড ফ্যাট’ যেমন ধরুন, ‘রেড মিট’ কিংবা পূর্ণমাত্রায় ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত দ্রব্যাদি। খাবারে অতিরিক্ত লবণের পরিমাণ। প্রক্রিয়াজাত কিংবা প্যাকেটজাত খাবার। অতিরিক্ত মশালাদার অথবা তৈলাক্ত খাবার হার্টের পক্ষে ক্ষতিকারক।
প্রঃ- হার্টের জন্য রসুনের উপকারিতা
উঃ- রসুন শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্র বজায় রাখতে ও সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন সঠিক রাখতে বিশেষ সহয়তা করে তাই প্রতিদিন সকালের এক কোয়া করে রসুন খাওয়া হার্টের জন্য খুব উপকারী।
প্রঃ হার্টের রোগের লক্ষণগুলো কী কী?
উঃ বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি, বুকের মধ্যে ধড়ফড় ওঠানামা অনুভূতি উপরের পিঠে বা ঘাড়ে ব্যথা, বদহজম, অম্বল, বমি বমি ভাব বা বমি, চরম ক্লান্তি, মাথা ঘোরা এবং শ্বাসকষ্ট। প্রভৃতি লক্ষণাদি হার্টের রোগের সঙ্গে যুক্ত, তাই এসব লক্ষণ বারংবার দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সহিত পরামর্শ করা উচিত।
প্রঃ হার্ট বিট নরমাল কত?
উঃ- স্বাভাবিক একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হার্টবিট বা হৃদস্পন্দন হওয়া উচিত ৬০-১০০ বার প্রতি মিনিটে। আর ৬ - ১৫ বছর বয়সী শিশুদের ৭০ - ১০০ বার প্রতি মিনিটে।
0 মন্তব্যসমূহ