তুলসী পাতার ঔষধি গুণাগুণ
তুলসী পাতার উপকারিতা অপরিসীমঃ হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে তুলসীগাছ বড়ই পবিত্র একটি গাছ। তা সে নিত্য পূজাই হোক বা দেবদেবীর ভোগপ্রসাদ, তুলসী পাতার ব্যবহার সকল ক্ষেত্রেই অনস্বীকার্য। তবে শুধু পূজার কার্যেই নয় রোগ
নিরাময়েও তুলসী পাতার ঔষধি গুণাগুণ সমূহ এই নিবন্ধের আলোচ্য বিষয়।
![]() |
তুলসী পাতার উপকারীতা। Tulsi leaf benefits |
তুলসি পাতা উপকারি, একথা প্রায় কারোরই অজানা নয়। কিন্তু তুলসিপাতা খেলে কোনো উপকারগুলো পাওয়া যায় সেকথা অনেকেরই জানা নেই। ওষুধ হিসেবে তুলসিপাতার ব্যবহার সেই যুগ যুগ ধরেই হয়ে আসছে। এই পাতায় আছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান, যেগুলো মারাত্মক সব রোগ যেমন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যদির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে পারে। এটি নানা গুণে অনন্য বলেই হাজার বছর ধরে ওষুধের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
555
আসুন জেনে নি তুলসি পাতার কিছু উপকারী দিক গুলি সম্পর্কে -
মানসিক চাপ কমায়ঃ-
তুলসীর ভিটামিন সি, অ্যান্টি-ইনফ্লেমটরি ও অন্যান্য অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। এ উপাদানগুলো
নার্ভকে শান্ত করে শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। তুলসী শরীরে কর্টিসোলের
মাত্রা কমিয়ে আনতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত উত্তেজনা ও মানসিকচাপ থেকে মুক্তি দেয় তুলসী চা।
![]() |
তুলসী পাতার উপকারীতা। Tulsi leaf benefits |
সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে উপকারীঃ-
যেকোনো বয়সের মানুষের ঠান্ডা, সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে তুলসী পাতা মহৌষধ। বাচ্চার সর্দি-কাশি থাকলে আধা চা–চামচ মধুর সঙ্গে তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খাওয়ালে কাশি কমে যাবে।
ফুসফুসের সমস্যা, ব্রঙ্কাইটিস রোগ প্রতিরোধকারীঃ-
তুলসী পাতায় রয়েছে অসাধারণ রোগ প্রতিরোধ
করার ক্ষমতা যেমন অ্যাজমা, ফুসফুসের সমস্যা, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি। বিভিন্ন সার্জারির পর বা কোনো ক্ষতস্থানে তুলসী পাতা বেটে
লাগালে তা বেশ তাড়াতড়ি শুকিয়ে ওঠে।
আরও পড়ুনঃ বাস্তু মতে তুলসী গাছের গুরুত্ব
ক্যান্সার প্রতিরোধকারীঃ-
ক্যান্সার এক মরণঘাতি অসুখের নাম। এই অসুখ দূরে রাখতেও
সাহায্য করে তুলসি পাতা। এই পাতায় আছে
রেডিওপ্রটেকটিভ উপাদান যা টিউমারের কোষগুলোকে মেরে ফেলে। এতে আরও আছে ফাইটোকেমিক্যাল যেমন রোসমারিনিক এসিড, মাইরেটিনাল, লিউটিউলিন এবং এপিজেনিন।
এসব উপাদান ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করতে কার্যকরী।
অগ্নাশয়ে যে টিউমার কোষ দেখা দেয় তা দূর করতেও তুলসী পাতা দারুণ উপকারী। পাশাপাশি
দূরে রাখে ব্রেস্ট ক্যান্সারও।
![]() |
তুলসী পাতার উপকারীতা। Tulsi leaf benefits |
ওজন
কমাতে ও হার্ট অ্যাটাক রোধে সহয়তাকারীঃ-
রক্তে সুগারের মাত্রা ও কোলেস্টরল দুটোই প্রতিরোধে সক্ষম তুলসী পাতা। তাই খুব সহজেই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এছাড়া সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, তুলসী পাতার দ্বারা রক্তের জমাট বাঁধার সমস্যাও দূর হয়, যার ফলস্বরূপ হার্ট অ্যাটাক বা হার্টের বিভিন্ন সমস্যা রোধ করাও সম্ভবপর হয়।
555
আরও পড়ুনঃ হার্ট ভালো রাখার উপায়
মুখের
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উপকারীঃ-
তুলসীতে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা মুখের সংক্রমণের বিরুদ্ধে
লড়াই করতে এবং সামগ্রিক মুখের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সহায়তা করে। প্রতিদিন তুলসীর
জল দিয়ে কুলকুচি করলে মাড়ি স্বাস্থ্যকর থাকে এবং নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূরভীত হয়।
![]() |
তুলসী পাতার উপকারীতা। Tulsi leaf benefits |
ত্বকের যত্নে উপকারীঃ-
ত্বকের যত্নের জন্যও তুলসী পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। তুলসী পাতায় থাকা ভিটামিন সি, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস ও এসেনশিয়াল অয়েলগুলো চমৎকার অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের কাজ করে, যা বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে। তুলসী পাতা বেটে সারা মুখে লাগিয়ে রাখলে ত্বক সুন্দর ও মসৃণ হয়।
সুগার বা ডায়বেটিস
প্রতিরোধকারীঃ-
তুলসি পাতা ইনসুলিন উৎপাদনের কাজ
করে। প্রতিদিন খাওয়ার আগে তুলসি পাতা খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা কমে। তুলসি অ্যান্টি
ডায়াবেটিক ওষুধের কাজ করে। তুলসিতে থাকা স্যাপোনিন, ত্রিতারপিনিন ও ফ্ল্যাবোনয়েড ডায়বেটিস রোধ করতে কার্যকরী।
![]() |
তুলসী পাতার উপকারীতা। Tulsi leaf benefits |
আরও পড়ুনঃ সুগার বা ডায়বেটিস কি কারণে হয়
555
ডিটক্সিফিকেশনঃ-
তুলসী পাতা ডিটক্সিফাইং বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন যা শরীর থেকে অনায়াসেই বিষাক্ত পদার্থ দূরভীত করতে অসম্ভব কার্যকরী।
পেটের সমস্যায় তুলসী পাতা মহৌষোধঃ-
পেটব্যথা, অম্বল,
গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি দূর করতে তুলসী পাতা দারুণ কার্যকরী।
পেটে আলসারের বিরুদ্ধেও তুলসী পাতা ভালো কাজ করে। পেটে ব্যথা হলে ২০ মিলি জল
১৫-২০টা তুলসী পাতা দিয়ে ফুটিয়ে অর্ধেক অর্থাৎ ১০মিলি করে নিন তারপর সেই জল ঠান্ডা
করে পান করুন। এতে পেটব্যথা ও হাইপার অ্যাসিডিটি খুব সহজে কমে যায়।
![]() |
তুলসী পাতার উপকারীতা। Tulsi leaf benefits |
তুলসী গুল্ম
প্রকৃতির উদ্ভিদ, এর উচ্চতা ৩ফুটের মত হয়। সারা বছরই তুলসী গাছে সবুজ পাতার সমাহার
দেখা যায়, এর পাতার কিনারা খাঁজ কাটা বিশিষ্ট এবং এর পাতা, ফুল ফল ঝাঁঝালো গন্ধ
বিশিষ্ট। জুলাই-আগষ্ট অথবা নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে তুলসী গাছে মঞ্জুরী হতে দেখা
যায়। তুলসী গাছের ঔষধি গুণাগুণও
রয়েছে ব্যাপক মাত্রায়। আমরা এই নিবন্ধে তুলসী
পাতার মাত্র ১০টি গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা করলাম।
উঃ তুলসী পাতার ইংরেজী নাম Holy Basil
উঃ তুলসী পাতার বিজ্ঞান সম্মত নাম Ocimum Sanctum
উঃ তুলসীতে আছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যা চোখের চুলকানি, পিচুটিজাতীয় সমস্যা দূরভীত করে ।
উঃ গর্ভাবস্থায় তুলসী পাতা সেবন করা অনুচিত কারণ তুলসী পাতা রক্ত পাতলা করে যার ফলে গর্ভপাতের আশঙ্কা বাড়ে।
যারা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণে রক্ত পাতলা করার ওষুধ সেবন করেন, তাদের খাওয়া একবারেই অনুচিত।
নিম্ন রক্তচাপ সম্পন্ন মানুষের তুলসী পাতার সেবন অনুচিত।
প্রঃ তুলসী পাতা ত্বকের জন্য কি উপকারী?
উঃ তুলসী পাতায় থাকা ভিটামিন সি, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস ও এসেনশিয়াল অয়েলগুলো চমৎকার অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের কাজ করে, যা বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে। তুলসী পাতাকে যৌবন ধরে রাখার টনিকও মনে করা হয়।
0 মন্তব্যসমূহ