Sajal Dhara Scheme of West Bengal | সজলধারা প্রকল্প
পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহের জন্য সজল ধারা প্রকল্প গৃহিত হয়েছিল। প্রকল্প অনুযায়ী, জল সরবরাহের জন্য গ্রামের ভিতরে ২ কিলোমিটার জুড়ে পাইপ বসানোর কাজও শেষ হয়। গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে, রাস্তার ধারে, স্কুলের ধারে, গ্রামের ভিতরে ২৪টি ট্যাপ পয়েন্ট করে কোথাও কোথাও সেগুলিও সিমেন্টের ঢালাই করে দেওয়া হয়।
![]() |
Sajal Dhara Scheme of West Bengal | সজলধারা প্রকল্প |
কেন্দ্রের কাছে কাছে বিরাট সাফল্য পেল মমতা সরকার। বিধানসভা ভোটকে নজরে রেখে এক সময় যে প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এবার বিধানসভা ভোটের পরে সেই প্রকল্পকে স্বীকৃতি দিলকেন্দ্র। গ্রামে মানুষের কাছে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার নিরিখে এবার দেশের মধ্যেশীর্ষ স্থানে বাংলা।
জল ছাড়া বেঁচে থাকাই এক প্রকার কঠিন। কথাতেই বলে জলের অপর নাম জীবন। তবে এখনও আমাদের দেশে এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে পানীয় জলের (Drinking Water) সমস্যা আজও বহাল। প্রতিদিনের পানীয় জল পেতে তাঁদের অনেক ঝুঁকি পেরোতে হয়। এবার সেই পানীয় জল (Drinking Water) পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে গেল বাংলার নাম। গ্রামে মানুষের বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহে উত্তরপ্রদেশ- বিহারসহ কেন্দ্রীয় সরকার শাসিত এমন একাধিক রাজ্যকে পিছনে ফেলে শীর্ষে উঠে এলো বাংলার (West Bengal) নাম। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তামিলনাড়ুর (Tamilnadu) নাম।
দেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার
মানোন্নয়নের জন্য কেন্দ্র গত বছর ‘জল জীবন মিশন’ প্রকল্প
চালু করে। গ্রামাঞ্চলে সকলের বাড়িতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ জল সরবরাহ করাই এর
উদ্দেশ্য। রাজ্যগুলির সঙ্গে সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর আওতায় এই
ফ্ল্যাগশিপ কর্মসূচিটি চালু করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করা
ছাড়াও মহিলাদের, বিশেষ
করে ছোট ছোট মেয়েদের দূর্দশা লাঘব করাই এই উদ্দেশ্য । এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্যই হল
গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি পরিবারে পাইপবাহিত জল পানের বিষয়টি সুনিশ্চিত করা। সাম্য এবং
সমন্বয়ের উপর ভিত্তি করে জল জীবন মিশনের প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত করা হয়। আগে
এই প্রকল্পে পরিকাঠামো তৈরির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হলেও বর্তমানে বাড়ি বাড়ি জল
পৌঁছে দেওয়ার ওপরেই জোর দেওয়া হচ্ছে।
এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অ্যানুয়াল অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়িত
করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে
দেখা গেছে সমস্ত রাজ্য তাদের জল জীবন মিশনের জন্য অ্যানুয়াল অ্যাকশন প্ল্যান জমা
দিলেও পশ্চিমবঙ্গ এখনও জলশক্তি মিশনের জাতীয় কমিটির কাছে কোন কর্মপরিকল্পনা জমা
দেয়নি।
আরও পড়ুনঃ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প সমূহ:
পশ্চিমবঙ্গে ৪১,৩৫৭টি
গ্রামে ১ কোটি ৬৩ লক্ষ বাড়ি রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে মাত্র ২ লক্ষ বাড়িতে পাইপ
বাহিত জল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ২০১৯-২০তে পরিকল্পনা করা হয়েছিল রাজ্যে ৩২ লক্ষ
২৪ হাজার বাড়িতে পাইপ বাহিত জল পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু মাত্র ৪,৭২০ বাড়িতে
জলের সংযোগ পৌঁছে দেওয়া গেছে। ২০২০-২১ সালে ৬৪ লক্ষ ৪৩ হাজার বাড়িতে জলের সংযোগ
দেবার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এরমধ্যে গত বছরের বকেয়া ৩২ লক্ষ ১৯ হাজার বাড়ির
হিসেবও রয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার জন্য তাই যথাযথ কৌশল নিতে হবে।
![]() |
Sajal Dhara Scheme of West Bengal | সজলধারা প্রকল্প |
২০১৯-২০ অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ৯৯৩ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু মাত্র ৪২১ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। বাকি অর্থ ব্যবহার করা হয়নি। এছাড়াও আর্সেনিক এবং ফ্লুরাইড অধ্যুষিত এলাকায় জল সরবরাহের জন্য ১,৩০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। যারমধ্যে ৫২৩ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়নি। তাই পয়লা এপ্রিল ২০২০-র হিসেব অনুযায়ী গ্রামাঞ্চলে বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহের জন্য পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় খাতে ১,১৪৬ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা রয়েছে। ২০২০-২১ সালে রাজ্যের জন্য ১,৬১০ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে এই খাতে পশ্চিমবঙ্গ ২,৭৫৭ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা পাবে। সব মিলিয়ে ২০২০-২১ সালে রাজ্যে সর্বত্র বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য জল জীবন মিশনের আওতায় ৫,৫১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়াও রাজ্যের জল প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করার সংস্থানও থাকছে। তাই পশ্চিমবঙ্গের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের জন্য প্রতি মাসের ভিত্তিতে প্রকল্প রূপায়ণের পরিকল্পনা করা উচিত।
আরও পড়ুনঃ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনাঃ
জল জীবন মিশনের আওতায় রাজ্যগুলি যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের প্রকল্পের
কাজ সম্পূর্ণ করতে পারে,
কেন্দ্র সেই বিষয়টি নিশ্চিত করছে। বর্তমান জল প্রকল্পগুলির ক্ষমতা বৃদ্ধির
ওপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে ৪১,৩৫৭টি গ্রামের মধ্যে ২২,১৫৫টি
গ্রামে অর্থাৎ ৫৪ শতাংশ গ্রামে নলের মাধ্যমে জল সরবরহের পরিকাঠামো রয়েছে। অথচ এইসব
গ্রামে মাত্র ২ লক্ষ বাড়িতে জলের সংযোগ রয়েছে। গ্রামে যাদের বাড়িতে জলের সংযোগ
নেই তাদের অধিকাংশই দরিদ্র এবং প্রান্তিক মানুষ। আগামী
৪-৬ মাসের মধ্যে এই কাজে গতি আনতে রাজ্যের সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। যেসব গ্রাম
উচ্চাকাঙ্খী জেলার অন্তর্ভুক্ত, তপশীলি জাতি ও উপজাতি অধ্যুষিত গ্রাম এবং সংসদ আদর্শ গ্রাম
যোজনার আওতায় থাকা গ্রামগুলিতে এই প্রকল্পের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
0 মন্তব্যসমূহ