ডুয়ার্স ভ্রমণ - বিন্দু, ঝালং, রকি আইল্যান্ড
ডুয়ার্স ভ্রমণঃ ডুয়ার্স (dooars) শব্দের অর্থ দরজা বা প্রবেশদ্বার। ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার এবং অসম রাজ্যের ধুবড়ি, কোকড়াঝাড়, বরপেটা, গোয়ালপাড়া ও বঙাইগাঁও জেলা নিয়ে সমগ্র ডুয়ার্স অঞ্চলটি গড়ে উঠেছে। এক সময় ভুটানের অসংখ্য প্রবেশপথ ছড়িয়ে ছিল জলপাইগুড়ির জেলার উত্তরাঞ্চলে। অনেকের মতে দুয়ার থেকেই ডুয়ার্স শব্দের উৎপত্তি। ভুটান সহ গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত ডুয়ার্স। বিস্তীর্ণ বনভূমি, ছোট-বড় পাহাড়, একাধিক নদী, চা বাগান সব মিলিয়ে এক অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে, ডুয়ার্স আপনার জন্য একেবারে সঠিক স্থান। পাহাড়, নদী, জঙ্গল– সব মিলিয়ে ‘প্রকৃতি’ বলতে যা বোঝায়, তার সঠিক উদাহরণ ডুয়ার্স। চারদিকে শুধু বন–নদী –পাহাড় আর নানা গাছের সমারোহ শান্তিকে হাতের মুঠোয় তুলে দেয়। ডুয়ার্স, জঙ্গল, পাহাড়, অসংখ্য নদী ঘেরা উত্তরের শান্ত-সবুজ নির্জন একটি এলাকা। স্বপ্নমাখা নীল আকাশের নিচে পাহাড়ের গায়ে একরাশ সবুজ। যেখানে হাজারও প্রজাপতির চঞ্চল ডানায় ছলকে ওঠে একরাশ রং। স্বপ্ন ও বাস্তবতার এক অপূর্বৃ স্বাদ গ্রহণ করতে মানুষ ছুটে চলে ডুয়ার্সের পথে।
![]() |
ডুয়ার্স ভ্রমণ | ডুয়ার্স ভ্রমণ গাইড। Dooars Tour & Travel |
আরও পড়ুনঃ পুরী ভ্রমণ
ডুয়ার্সের ইতিহাস-
ডুয়ার্স ভারতের কোচ রাজবংশের অধীনে কামতা রাজ্যের একটি অংশ গঠন করেছিল। এরপরে এটি ভুটান এবং পরবর্তীকালে ১৮৬৫ সালে ব্রিটিশদের অধীনে আসে। ব্রিটিশরা ১৯৪৭ সালে ভারত ত্যাগ করে এবং ১৯৪৯ সালে ডুয়ার্স আবারও ভারত ইউনিয়নের অঙ্গ হিসাবে পরিণত হয়। এখানকার অধিবাসীরা হলেন মূলত বাঙালি নেপালি ও আসামী উপজাতিরা হলেন আসামীয়া।
![]() |
ডুয়ার্স ভ্রমণ | ডুয়ার্স ভ্রমণ গাইড। Dooars Tour & Travel |
আরও পড়ুনঃ- মন্দারমণি ভ্রমণ
ডুয়ার্স এর দর্শনীয় স্থান
লাটাগুড়ির জঙ্গল, গরুমারা
ন্যাসানাল পার্ক, সামসিং, প্যারেন, চুকচুকিওয়াচ, চিলাপাতা ফরেস্ট, সাগর দীঘি, মদন মোহন
মন্দির সহ একাধিক জনপ্রিয় ভ্রমণ স্পট রয়েছে ডুয়ার্সে। শিয়ালদহ থেকে কেবল মাত্র
একটি ট্রেনই (কাঞ্ছন কন্যা এক্সপ্রেস) নিউ মাল জংশন পর্যন্ত চলাচল করে। তবে নিউ
জলপাইগুড়ি থেকে গাড়ি করে লাটাগুড়ি আসা যায়।
লাটাগুড়ির জঙ্গল সাফারির
মজাই আলাদা। জলপাই রং-এর উর্দিধারী গাইড ও ড্রাইভারকে নিয়ে রাইনো জিপের সাওয়ারি
করতে ভুলবেন না। ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা মিলতে পারে গণ্ডার, বাইসন, হাতি কিংবা
ময়ূরের। কুমাই চা-বাগান এবং কুমাই ফরেস্ট পার করে নকশাল চেকপোস্ট থেকে কিছুটা
এগোলেই যে ভিউ পয়েন্ট দেখতে পাবেন তার সৌন্দর্য আপনাকে পাগল করে দেবে। ডুয়ার্সের
অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হলো জলদাপাড়া। এখানে এসে হাতির পিঠে চরে জঙ্গল সাফারি না
করলে আপনার ডুয়ার্স ভ্রমণ ব্যর্থ। কেবলমাত্র সকালের তিনটি স্লটে এক ঘণ্টার জন্যই
এই সাফারির মজা নেওয়া যায়। বক্সা টাইগার রিজার্ভের জয়ন্তী বিট এখনকার অন্যতম
শ্রেষ্ঠ আকর্ষণীয় টুরিস্ট স্পট। ৬,৮ কিংবা ১০ জনের গ্রুপে ডুয়ার্সে
গেলে বাজেটে বেশ কিছুটা সাশ্রয় হয়। অন্যথায় জনপ্রতি খরচের তারতম্য ঘটতে পারে।
গরুমারা ন্যাশনাল পার্ক
এটি ডুয়ার্সের মালবাজার
অঞ্চলে অবস্থিত।গোরুমারা জাতীয় উদ্যান মূলত গন্ডারের জন্য বিখ্যাত। লাটাগুড়িতে
থেকে গরুমারা দেখতে হয়। বনে প্রবেশের জন্য অনুমতি নিতে হয় বন দফতরের লাটাগুড়ি
রেঞ্জ অফিস থেকে। এই উদ্যানে রয়েছে চারিদিকে শাল সেগুনের গাছের ছায়া। এছাড়াও
জঙ্গলে রয়েছে প্রচুর পাখি,হাতি,সম্বর
ইত্যাদি। মূলত ডুয়ার্স অঞ্চলের জলদাপাড়া-চাপড়ামারি-গোরুমারা রেঞ্জের অন্তর্গত
এই জাতীয় উদ্যান। এখানে চাইলে জিপ নিয়ে
সাফারি করতে পারেন। সাফারি করার সময় ভাগ্য ভালো থাকলে ময়ূর,হরিণ, গন্ডারের
দেখা পেতে পারেন।
![]() |
ডুয়ার্স ভ্রমণ | ডুয়ার্স ভ্রমণ গাইড। Dooars Tour & Travel |
জলদাপাড়া ন্যাশনাল পার্ক
জলদাপাড়া একটি জাতীয় উদ্যান যা সেন্ট্রাল ডুয়ার্সে অবস্থিত। এখানে তোর্সা নদীটি জাতীয় উদ্যানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই পার্কটিতে রাজ্যের অন্যতম শিংযুক্ত ভারতীয় গণ্ডার বৃহত্তম জনসংখ্যা রয়েছে। চিতাবাঘ, সাম্বর, হাতি, হরিণ, বুনো শূকর, দাগযুক্ত হরিণ এবং জলদাপাড়ায় পাওয়া অন্যান্য প্রাণীগুলির মধ্যে কয়েকটি। এখানকার চিলাপাতা জঙ্গলটিও আকর্ষণীয় জঙ্গল সাফারি করার জন্য।
চাপরামারি
চাপরামারি উত্তরবঙ্গের
জলপাইগুড়ির অন্তর্গত চালসা এবং লাটাগুড়ি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত
চাপরামারি বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য। ১৯৯৮ সালে কেন্দ্রীয় সরকার এই জঙ্গলকে জাতীয়
বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যের আখ্যা দিয়েছেন। মূর্তি নদীর পাশ দিয়ে এটি গড়ে উঠেছে। এর
কিছুটা দূরেই রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। এখানে রাত কাটাতে চাইলে রয়েছে চাপরামারি বন
বাংলো।এখানে এশীয় হাতি,
বাইসন, সম্বর
হরিণ, চিতাবাঘ
এবং বন্য শুকোর চাপরামারি অভয়ারণ্যের মূল আকর্ষণ।
আরও পড়ুনঃ- তিনচুলে ভ্রমণ
চালসা গৌরীগাঁও
লাটাগুরি থেকে ২০ কিমি দূরে অবস্থিত চালসা।একটি শান্ত নিরিবিলি সবুজের হাতছানি। এখান থেকে ১কিমি দূরে রয়েছে গৌরীগাঁও। চারিদিকে চা বাগান,ও পাহাড়বেষ্টিত স্থান।
বক্সা জাতীয় উদ্যান
বক্সা জাতীয় উদ্যান
ভারত-ভুটান আন্তর্জাতিক সীমান্ত ও সিঞ্চুলা পর্বতমালার কাছে অবস্থিত।১৯৯৭ সালে
রাজ্য সরকার বক্সাকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে।বক্সা জাতীয় উদ্যানের মধ্যে
রয়েছে বক্সা দুর্গ। এখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন ৩০০টির ও বেশি গাছ, বিভিন্ন
প্রজাতির পাখি ও বাঘ,হরিণ,বুনো মোষ,পাইথন,হাতি
ইত্যাদি। বক্সা জাতীয় উদ্যানের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে রায়ডাক ও জয়ন্তী
নদী।বক্সা ট্রেকিং এর জন্য জনপ্রিয়।
জয়ন্তী
বক্সা জঙ্গলের ধার ঘেঁষে
রয়েছে জয়ন্তী।জয়ন্তীকে ডুয়ার্সের রানী বলা হয়। চারিদিকে পাহাড় আর জঙ্গলের
সমারহ তবে জয়ন্তী থেকে মহাকাল মন্দির পর্যন্ত ট্রেকিং করার সুযোগ রয়েছে। জয়ন্তী
নদীর গা ঘেঁষে ভুটান সীমান্তে পাহাড়ের মাথায় আধ ঘন্টার ট্রেকিং পথে পৌঁছানো
যায়।
![]() |
ডুয়ার্স ভ্রমণ | ডুয়ার্স ভ্রমণ গাইড। Dooars Tour & Travel |
ঝালং
লাটাগুরি চালসা থেকে যেতে
পারেন ঝালং গ্রামে।ঝালং এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে জলঢাকা নদী। ঝালং গ্রামে রয়েছে
একটি মনেস্ট্রি।ঝালং থেকে ভুটানের ঝলক দেখা যায়।একটি প্রাইভেট গাড়ি বুক করে ঘুরে
আসুন ঝালং,বিন্দু।
জলঢাকা নদীর গা ঘেঁষে রয়েছে তাঁবুর ব্যবস্থা। সেখানেও চাইলে থাকতে পারবেন। তবে
এখানে থাকতে হলে কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ বনদপ্তর থেকে তাঁবু বুক করতে হবে।
বিন্দু
![]() |
ডুয়ার্স ভ্রমণ | ডুয়ার্স ভ্রমণ গাইড। Dooars Tour & Travel |
সুলতানখোলা
সুলতানখোলা কালিম্পং জেলার
অন্তর্গত একটি গ্রাম। ঝুলন্ত ব্রিজ পেরিয়ে সুলতানখোলায় পৌঁছাতে হয়। এখানে
পাহাড়ি ঝর্ণা রয়েছে আর অবশ্যই চারিদিকে সবুজ প্রান্তর।
রকি আইল্যান্ড
![]() |
ডুয়ার্স ভ্রমণ | ডুয়ার্স ভ্রমণ গাইড। Dooars Tour & Travel |
সুলতানখোলা হয়ে সামসিং হয়ে
ঘুরে আসতে পারেন রকি আইল্যান্ড থেকে। বড়ো বড়ো পাথরের চাঁই তার মধ্যে দিয়ে বয়ে
গেছে মূর্তি নদী। অসম্ভব সুন্দর এক প্রাকৃতিক দৃশ্যের সৃষ্টি করে যা সামনে থেকে না
দেখলে বোঝার উপায় নেই। তবে বর্ষাকালে এখানে যেতে দেওয়া হয় না কারণ তখন জলের
স্রোত প্রবল থাকে তাই বিপজ্জনক কিছুটা।
আরও পড়ুনঃ- দারিংবাড়ী ভ্রমণ
এছাড়াও যে জায়গাগুলো খুব
জনপ্রিয় সেগুলো হলো–
সামসিং, গোরুবাথান, খয়েরবাড়ি, ডামাডিম, চেইন খোলা, ফাগু, রসিকবিল, রাজাভাতখাওয়া
ইত্যাদি।
ডুয়ার্স যাওয়ার আদর্শ সময় হল – সেপ্টেম্বরের শেষর দিক থেকে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ অবধি।
Eco Greenery Resort:
সুবিস্তৃত চা-বাগানের কোলে প্রাকৃতিক সুরম্য
স্থানে ইকো গ্রিনারী রিসো©ট টি অবস্থিত। রিসো©টির হোমলি
অ্যাটমোস্ফিয়ারে আর সুস্বাদু আহার ব্যবস্থায় আগত পর্যটকদের মন ও পেট দুই ই পূর্ণ
হবে গ্যারান্টি সহকারে।
ভাববেন না এটা কোনো বিজ্নেস অ্যাড, এটি শুধু মাত্র আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা যা
আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
ইকো
গ্রিনারী রিসো©ট কিছু ফোটো
ডুয়ার্স ভ্রমণ | ডুয়ার্স ভ্রমণ গাইড। Dooars Tour & Travel |
ডুয়ার্স ভ্রমণ | ডুয়ার্স ভ্রমণ গাইড। Dooars Tour & Travel |
ডুয়ার্স ভ্রমণ | ডুয়ার্স ভ্রমণ গাইড। Dooars Tour & Travel |
উঃ ডুয়ার্স, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম এই দুই রাজ্যের বেশ কয়েকটি জায়গা নিয়ে সমগ্র ডুয়ার্স অঞ্চলটি গঠিত। পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার এবং অসমের ধুবড়ি, কোকড়াঝাড়, বরপেটা, গোয়ালপাড়া ও বঙাইগাঁও জেলার অংশ নিয়ে ডুয়ার্স অঞ্চলটি গড়ে উঠেছে।
3 মন্তব্যসমূহ
Khub sundar
উত্তরমুছুনখুব বেশি সংক্ষিপ্ত লিখেছেন
উত্তরমুছুনInformative Niche
উত্তরমুছুন