গোয়া শুধু একটা ঘুরতে যাওয়ার জায়গা না, স্বাধীনতার অন্য আরেক নাম গোয়া
গোয়া: ভ্রমণের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, ভারতের পশ্চিম দিকে আরব সাগরের তীরে অবস্থিত এই ছোট্ট রাজ্যটি পৃথিবী বিখ্যাত। গোয়া শুধু একটা ঘুরতে যাওয়ার জায়গা না, স্বাধীনতার অন্য আরেক নাম। গোয়া হল সেই স্বাধীনতা যা আপনাকে নিত্যকর্ম থেকে এক লাফে নিয়ে আসতে পারে অসীমের সামনে। অসীম যা নাকি অতুল মনির সন্ধানে, সমুদ্রের মাঝে গিয়ে ঝাঁপ দেয় এক মারিয়ানা খাতে। আচ্ছা না হয় মানলাম মারিয়ানা খাত অনেক দূরের কথা, আরব সমুদ্রের কোন খাত ই বটে।
![]() |
ভ্রমণের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য- গোয়া | গোয়া ভ্রমণ গাইড | GOA Travel |
গোয়া ভ্রমণ গাইড:-
গোয়ার তুমুল জনপ্রিয়তার জন্য, ইন্ডিয়ান রেলওয়ের কৃতিত্ব কিছু কম নয়। মারগাও আর ভাস্কোডাগামা এই দুটি বড় স্টেশন ভারতের সমস্ত প্রান্তের সাথে গোয়ার সরাসরি যোগাযোগ তৈরি করেছে। ব্যাঙ্গালোর থেকে তো গোয়া যাওয়ার জন্য আমার সবথেকে প্রিয় উপায় হল রাতের ট্রেন। ধীরে ধীরে সেই ট্রেন পশ্চিমঘাট পর্বতের গা বেয়ে উঠে যায় এক মেঘমালাপুর। মাঝে মাঝে, বিশেষত বৃষ্টির সময়, পশ্চিমঘাট পর্বতকে দেখে মনে হয় দার্জিলিংয়ের হারিয়ে যাওয়া ভাই। ঘনসবুজ গাছ যার দিকে তাকালেও নাকে আসে বৃষ্টির গন্ধ, তার মধ্যে খেলা করে মেঘ। মাঝে একবার হঠাৎ করে দেখা দেয় দুধসাগর ঝরনা। বিশাল সেই ঝরনা বর্ষাকালে বিরাট আকার ধারণ করে।
এখানে ওলা বা উবার চলে না, তবে গোয়ামাইলস অ্যাপটি ডাউনলোড করে দেখতে পারেন। উবারের মত এত সুন্দর সার্ভিস
নয় তবে সকাল বিকেলে গাড়ি পাওয়া সম্ভব। নেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে আগে থেকেই টাকা
দিয়ে দিতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ- ডুয়ার্স ভ্রমণ
ফন্টেনহাস পাড়া
![]() |
ভ্রমণের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য- গোয়া | গোয়া ভ্রমণ গাইড | GOA Travel |
এখানে, প্রতিটি বাড়ির গায়ে রামধনুর সাত রং। স্থানীয় লোকেরা এখানে শান্তিতে বসবাস
করতেন কিছু বছর আগে অব্দি। কিন্তু ইনস্টাগ্রাম পাগল ফটোগ্রাফারদের যাতায়াত শুরু
হওয়ার পর থেকে, ফন্টেনাসের চেহারা বদলে গেছে। অনেকগুলি
সুন্দর ক্যাফে তৈরি হয়েছে। বোম্বে কফি রোস্টার্স আর গীতাঞ্জলি গ্যালারি, এখানে যদি আপনি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিশেষ কিছু খাবার
খেতে চান, একবার চট করে সোল শেফ গোয়াতে ঢু্৺ মেরে আসুন
ভেলহা গোয়া
পানাজি থেকে আধ ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত ভেলহা গোয়া। ভেলহা কথাটি একটি পর্তুগিজ শব্দ, অর্থ পুরাতন।
পুরানো গোয়া একটি ঐতিহাসিক জায়গা। অসংখ্য পুরানো চার্চ, সরু গলি, পুরানো বাড়ি, কুনবি শাড়ি পরিহিতা গোয়ান রমণী, সব মিলিয়ে ৫০০
বছরের ইতিহাস এখানে সময় নামক এক শিল্পীর চর্চিত তুলির টানে মায়াবী রূপ পেয়েছে।
পর্তুগিজ শাসন কালীন, এই ভেলহা গোয়া ইউরোপকে নিয়ে এসেছিল ভারতের দোরগোড়ায়। সঙ্গে অসংখ্য খৃষ্টান
মিশনারী, যারা পরবর্তীকালে ভারতের বিভিন্ন উপজাতি বেল্টে যীশু
খ্রীষ্টের বাণী প্রচার করেছিলেন। ভেলা গোয়ার অন্য নাম ছিল পূর্ব পৃথিবীর রোম।
বাসিলিকা অফ বম জেসাস, এই অসহ্য সুন্দর গির্জাটিতে পা রাখলেই
আপনি বুঝতে পারবেন রোম কি করে ভারতে পাড়ি দেয়। এটি একটি ইউনেস্কো ঐতিহ্যশালী
প্রতিষ্ঠান।
৩০০ বছর আগে প্লেগ মারণ রোগ গাড়ি পুরনো
রাজধানীর জীবন কাঠি শুষে নেয়। মানুষজন পাড়ি জমান আশেপাশের বিভিন্ন নদীবক্ষীয়
দ্বীপপুঞ্জে। এমনই একটি বিশাল দ্বীপ হলো দিভর। ভারতের একমাত্র আয়ুর্বেদিক
ওয়েলনেস রিসোর্ট, মারকিউরি দেভায়া, এখানে অবস্থিত।
পাশের দ্বীপটিতে বিখ্যাত ডক্টর সালিম আলী পাখিরালয়। সবুজে সবুজ এই অঞ্চলটি ঘন ম্যানগ্রোভ
জঙ্গল, মান্ডবী নদীর মুখরা, পুরনো পর্তুগিজ
কুটির, আর শান্ত কিছু গোয়ার গ্রাম দিয়ে তৈরি। অবশ্য বন্দেরাম উৎসব হওয়া কালীন, দীভরের চেহারা পাল্টে যায়। আর কার্নিভাল, ভারতের মারডি গ্রাস, বা রিও ডি জেনেরিও কার্নিভালের সমকক্ষ
একটি উৎসব, যা কিনা পাঞ্জিমের নিজস্ব।
ক্যান্ডোলিম
কাছেই সমুদ্র। বাইকে ১০ মিনিট। হেঁটে
গেলে আধঘন্টা। সমুদ্রের ধারেও হোটেল আছে কিন্তু তার দাম বেশি। এই দুইটি মোটামুটি
প্রতি জন ৭০০ টাকা|
প্রতি রাতের জন্য। গোয়াতে বাইক ভাড়া করা খুবই সহজ। প্রতিদিন বাইক ভাড়া
আড়াইশো টাকা।
জীপ বা গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়। এক হাজার থেকে দেড়
হাজার টাকা ভাড়া লাগে দিনের হিসেবে। প্রথমবার যদি গোয়া যাচ্ছেন তাহলে আরব সাগরের
ধারে পুরো ছুটিটা কাটানো যায়। প্রকৃতি অসহ্য সুন্দর একটি রূপ দেখে বসে আছে, তাকে কাটিয়ে আরো কিছু দেখা অসম্ভব। অন্তত প্রথমবার।
![]() |
ভ্রমণের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য- গোয়া | গোয়া ভ্রমণ গাইড | GOA Travel |
আরও পড়ুনঃ- তিনচুলে ভ্রমণ
উত্তর না দক্ষিণ গোয়া?
গোয়াকে মোটামুটি দু’ভাগে
ভাগ করা যায় উত্তর, দক্ষিণ। উত্তর ভালো না দক্ষিণ, এই বিতর্ক মোটামুটি ডিম আগে না মুরগি তার সমকক্ষ। দক্ষিণ গোয়া সবকিছু থেকে
দূরে, আরো দূরে। স্বাভাবিকভাবে ভিড় এখানে কম। গোয়ার বিখ্যাত
অধরা সমুদ্র, না ছোঁয়া জঙ্গল, লুকানো সমুদ্রতট, সব লুকিয়ে আছে দক্ষিণ গোয়াতে। গোয়া
বিশেষজ্ঞদের মত এমনই।
তবে উত্তরও কিছু কম নয়। বিশেষত আরামবোল, সত্তরের দশকের হিপীদের বাড়িঘর। আর ঐ উত্তর-দক্ষিণে ঝামেলায় না পড়ে, কিছু লোক (আচ্ছা ঠিক আছে, বেশিরভাগই) বাগা বা ক্যালাঙ্গুটেতে থেকে
যান। গোয়ার বিখ্যাত সমুদ্র সৈকত বাগা, ভারতের তথা
এশিয়ার অন্যতম বড় সমুদ্রতট। বছরকার দিনে এখানে প্রায় ১০ লাখ মত লোক হয়। প্রচুর
থাকার জায়গা প্রচুর খাবার জায়গা। মোটামুটি সস্তা। তবে হ্যাঁ দামি বৈভব শালী
হোটেল কিছু কম নেই আশেপাশে। তাজ থেকে শুরু করে লে মেরিডিয়েন, সব।
আরও পুড়নঃ পুরী ভ্রমণ
গোয়া: উত্তরের বীচগুলি
ক্যান্ডোলিম থেকে লাগাতার প্রায় এক ঘন্টার রাস্তা।
বাইক কিছুটা সমুদ্রতটের পাশ দিয়ে চলে, কিছুটা চলে
নারকেল গাছের বনের মধ্যে। পথের ধারে বসে থাকে সাদা রংয়ের সারস। নাকি ওগুলি বক? উত্তরের পথে যেতে প্রথমে আসে বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট বৃত্ত’স (Britto’s)। এখানকার সামুদ্রিক মাছের সম্ভার অত্যন্ত বিখ্যাত। ভাজা চিংড়ি আর ভাজা স্কুইড,
কিং-ফিশ স্টেক, সেটিও খেয়ে দেখতে পারেন, মন্দ নয়।
প্রথমে ভাগাটর নাম একটি জায়গায়। যদিও ছোট কিন্তু
গোয়ার এই বীচ সবথেকে সুন্দর লাগে। পাহাড় থেকে নিচে নামতে হয়, তবে গিয়ে সমুদ্রে পা ভেজানো যায়। এর পাশেই আছে চাপোরা দুর্গ। দুর্গের ভগ্নাবশেষ বলাই সঠিক।
সাধারণত এখানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখা হয়। এখানে আমির খানের বিখ্যাত সিনেমা দিল
চাহতা হেয় শুটিং হয়েছিল।
এখান থেকে আঞ্জুনা। অঞ্জনা ও পাথরের সমুদ্রতট, একেবারেই সাঁতার কাটার অযোগ্য। তবে এখানে
পার্টি হয়, ভোর রাত অব্দি। আর এখানকার রাতের বাজার।
বিকিনি থেকে শুরু করে গণেশ ঠাকুর আঁকা দেওয়ালে ঝোলানো চাদর, কি না পাওয়া যায় এখানে। একেবারে আমাদের কলকাতা নিউমার্কেট। এই বাজারটি আসলে
হীপিদের একটি ঠেক ছিল। হীপিরা কোন জায়গায় বেশিদিন থাকতেন না এবং বেশি জিনিসপত্র
অধিকার করে রাখতেন না। ব্যবহার করা, অধিকার করে
রাখা: দুটির মধ্যে পার্থক্য আছে! চলে যাওয়ার আগে ওনাদের যা কিছু পার্থিব সম্বল, উনারাই বাজারে বিক্রি করে যেতেন, নবীনদের জন্য।
তখনকার বদ্ধ অর্থনীতিতে, হীপিদের দের আনা ইউরোপিয়ান দূরবীন বা রেডিও ভারতের বাজারে বিশাল দামে বিক্রি
হতো। তবে সেদিন ও নেই, নেই সেই হীপিরাও। বাগা বিচ ফেরত এসে ঢুকে
যেতে পারেন রত্নাকর নামের বারে। সমুদ্রের ধারে বেশ বড় একটি রেস্টুরেন্ট, গমগম করে কারাওকে গানে। আর যদি একটু শান্ত পরিবেশ চান, আমার পছন্দ সুজা লোবো।
ক্যান্ডোলিম এর কাছে আরেকটি অত্যন্ত সুন্দর দুর্গ
আছে। ৫০০ বছর পুরনো এই দুর্গের নাম আগুআড়া। মারাঠা আর ডাচদের থেকে সাম্রাজ্য
বাচাতে পর্তুগিজরা এই দুর্গটি তৈরি করেছিল। পুরনো দিনে ইউরোপিয়ান জাহাজ এখানে
দাঁড়িয়ে খাওয়া জল ভরে নিতো। এখনো একটি চারতলা লাইটহাউস দাঁড়িয়ে আছে দুর্গের
ধারে।
সিনকেরেম বীচ, অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস
দুর্গের কাছেই রয়েছে সিনকেরেম বীচ। আপনি
কি প্যারাসেইলিং করতে চান, বা বলিউড হিরোদের মত জেট স্কি? নাকি রাবারের ভেলায় করে সমুদ্রে কিছুটা ঘুরে আসতে চান? এই বীচেই সব রকমের ওয়াটার স্পোর্স হয়ে থাকে। মোটামুটি ৮০০ থেকে দুই হাজার
টাকা প্রত্যেকটি লোকের ভাড়া। তবে হ্যাঁ বর্ষাকালে সব বন্ধ। আপনি যদি দক্ষিণে
থাকেন, তাহলে পালোলেম বীচেও এ ধরনের অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস হয়ে
থাকে। দক্ষিনে দাম টা তুলনামূলকভাবে কম। কপাল ভালো থাকলে, একটি-দুটি ডলফিন আপনার সাথে সাঁতার কেটে দেখা করে যাবে।উত্তর গোয়াতে, মেয়েম হৃদের ধারে, শুরু হতে চলেছে বাঞ্জি জাম্পিং।
![]() |
ভ্রমণের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য- গোয়া | গোয়া ভ্রমণ গাইড | GOA Travel |
দক্ষিণ গোয়া
দক্ষিণের বীচগুলি তুলনামূলকভাবে শান্ত।
সাদা বালি আর স্বচ্ছ জল, ভারতের মূল ভূখণ্ডের কাছাকাছি একমাত্র
গোয়াতেই এ জিনিস দেখা যেতে পারে। দক্ষিণ গোয়া আমার প্রিয় বীচ গুলি হল: Colva, পালোলেম, পাটনেম, খোলা, ভেলসাও, বেনাওলিম। আরো নিচে আপনি কারোয়ার চলে
আসতে পারেন, এখান থেকে কর্ণাটক শুরু।
গ্রীষ্মকালে বা শীতকালে, এখান থেকে ট্রেক করে দুধ সাগর ঝরনা অব্দি যাওয়া যায়। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক লোক দুধ সাগর পৌঁছতে পারেন তাই, যত সকালে সম্ভব যাত্রা শুরু করুন। কাছাকাছি গ্রামটিতে পৌঁছিয়ে আপনাকে স্থানীয় জীপ ভাড়া করে ট্রেকের শুরু অবধি যেতে হবে।
দক্ষিণ গোয়ার সমুদ্রের ধারে মানগ্রোভ
জঙ্গলে নৌকা বিহার সম্ভব। একদিন নৌকো নিয়ে বাটার ফ্লাই বীচ যাওয়া যায়। এখানে, গাড়ি নিয়ে বা হেঁটে যাওয়ার উপায় নেই, কাজে খুব বেশি
লোক এর ব্যাপারে জানে না। দক্ষিণ গোয়া ডাবোলিম থেকে মোটামুটি ৬০ কিলোমিটার দূরে।
দুরত্বের জন্যই এখানে ভিড় কম।
আরও পড়ুনঃ- মন্দারমণি ভ্রমণ
বর্ষাকালীন গোয়া
এই সুমোহিনী নীল আকাশ আর নীল সাগরের
প্রেমের দৃশ্য কিন্তু ক্ষণস্থায়ী। যে ক’টি দিন উত্তর
ভারত শীতে থরথর কম্পমান, দক্ষিণ-পশ্চিমের এই সমুদ্র সৈকত ততদিন
রোদে ঝলমল। মৌসুমী বায়ু এখানে নিয়ে আসে প্রচন্ড ঝন্ঝা। কালো মেঘ আকাশকে থমথমে
করে তোলে। যে আরবসাগর সাধারনত শান্ত সুগভীর সহিষ্ণু, সে ফুঁসে ওঠে রাগে।
বৃষ্টির সময় কি গোয়া আসা যায়? যায়, যদি না সমুদ্রস্নানের বিশেষ ইচ্ছে থাকে।
এই সময় গোয়া অসহনীয় সবুজ। সবুজের
পঞ্চাশটি রং। গোয়া একটি একটি করে সবুজ আপনার প্রাণে ছড়িয়ে দিতে পারবে। বর্ষার
সময় যদি গোয়া আসেন, কিছুদিন হাউসবোটে থেকে দেখুন। জানি
হাউসবোট কেরালার একচেটিয়া দম্ভ। গোয়া কিন্তু কম যায় না। একদিন সাইকেল নিয়ে
বেরিয়ে যান ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে। ঘরে ফিরে আসুন দু’চারটে
নারকেল হাতে করে। সমুদ্রের ধারে ও হেঁটে আসতে পারেন। তবে হ্যাঁ, জলে যাবেন না। বর্ষাকালে প্রায়ই খবরের কাগজে কিছু অসময়ে মৃত্যুর ঘটনা চোখে
পড়ে। অল্প বয়সে আরব সাগর কে চ্যালেঞ্জ করার ফল বিশেষ ভাল হয় না।
কয়েকটা জিনিস মনে রাখুন। প্রতিবছর
গোয়াতে ভ্রমণকারীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে, বীচে ছড়িয়ে থাকা প্লাস্টিক। দয়া করে আপনার ব্যবহার করা প্লাস্টিক টি নিজেই
ফিরিয়ে আনুন। লুপ্তপ্রায় অলিভ রিডলী কচ্ছপগুলি তাহলে হয়তো কিছুদিন বেশি বাঁচবে।
যদি মনে হয় সেন্ট্রাল গোয়া অত্যন্ত
বেশি ভিড়, চট করে একটু উত্তর বা দক্ষিণের দিকে চলে যান। এখানকার
সমুদ্রতট প্রায় জনহীন। বিত্তশালী হোটেল হয়তো নেই কিন্তু থাকার জায়গা পেয়ে
যাবেন, তুলনামূলকভাবে সস্তায়।
গোয়ার স্থানীয় মানুষ খুবই সহৃদয়।
সাংঘাতিক দুষ্কর্ম এখানে হয় না বললেই চলে। গাজা খাওয়া বি ড্রাগস, বাকি ভারতের মত গোয়াতেও বেআইনি। তবে হ্যাঁ, কিছু চ্যাংড়া ছেলের দল সর্ব ঘটে কাঁঠালি কলার মত গোয়াতেও উপস্থিত। এদেরকে
এড়িয়ে চলুন। একসাথে ছবি তোলার ইচ্ছাতেও সাড়া দেবেন না।
ট্যাক্স কিছুটা কম হওয়ার জন্য গোয়াতে
মদের দাম কম, ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায়। তা বলে
ভাববেন না আপনি যত ইচ্ছা মদ কিনে নিজের রাজ্য তে ফেরত যেতে পারেন। প্লেন বা
ট্রেনের বিভাগীয় কর্তার সাথে কথা বলে জেনে নেবেন, প্রতি মানুষ পিছু কতটা মদ নিয়ে আসা যায়।
আরও পড়ুনঃ দারিংবাড়ী ভ্রমণ
গোয়ায় খাওয়া-দাওয়া
বলাইবাহুল্য সমুদ্রের ধারের রাজ্য গোয়া, মাছের এখানে কোন কমতি নেই। বেশিরভাগই সামুদ্রিক মাছ, পমফ্রেট, চিংড়ি। রান্নায়, বিশেষত কোঙ্কণী রান্নায়, বাঙ্গালীদের মতনই নারকেলের দুধ দিয়ে
ভালোবাসা উদযাপন। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে পর্তুগীজদের প্রভাব। টাটকা শুয়োরের মাংস
দিয়ে কষিয়ে রান্না করা হয় ভিন্দালু। খাওয়া হয় গরম ভাত দিয়ে মেখে। প্রতিটি
তরকারিতে কিছুটা টক ভাব। এই টক স্বাদের উৎস কিন্তু কোকুম ফল। সোল কাড়ি, কোকুম দিয়ে তৈরি একটি পানীয়। আর হ্যাঁ, আপনি যদি বাঙালি
রান্নার খোঁজ করছেন, নিরাশ হবেন না। প্রত্যেকটি বড় সমুদ্র
সৈকতে বাঙ্গালীদের জন্য বিশেষ “মিল সিস্টেম” চালু আছে। কাতলা থেকে পাবদা সব রকমের নদীর মাছ সেখানে পরিবেশিত হয়। তবে হ্যাঁ
মিষ্টি পাওয়া যাবে না। মিষ্টির জন্য আপনাকে গুড় ও নারকেল দিয়ে তৈরি বিবিন্কা
কেকের ওপরেই নির্ভর করতে হবে।
![]() |
ভ্রমণের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য- গোয়া | গোয়া ভ্রমণ গাইড | GOA Travel |
গোয়া সবধরণের মানুষদের পছন্দের শহর।
যদি আপনি প্রতি রাত ₹. 6000 এর কম খরচ করতে চান তাতেও ঘাবড়াবেন
না। আপনি এর কমেও পেয়ে যাবেন আরামদায়ক থাকার জায়গা। এই হল আমাদের গোয়ার ছয়টি
সাশ্রয়ী হোটেলের লিস্ট।
আমিগো প্লাজা
আমাদের পছন্দ: বিচের ধারে আরামপ্রদভাবে থাকা
কোল্ভা বিচ থেকে
মাত্র 200 মিটার দূরে অবস্থিত, এই রিসোর্ট
আপনাকে সাদা বালুময় বিচে উদাসীন, শান্তভাবে হেঁটে বেড়ানো প্রতিশ্রুত করে।
সাধারণ আর পরিচ্ছন্ন ঘর, স্টাফেদের বন্ধুত্ত্বপূর্ণ ব্যবহার এবং
আরামে থাকা- এই হোটেল আপনাকে উপহার দেয়। আরও মজার জন্য বাইরে সুইমিং পুলে ডুব দিন, গরম টাবে ওয়ার্ম সোক উপভোগ করুন বা পুনর্যৌবন লাভ করতে আয়ুরবেদিক ম্যাসাজ নিন।
খরচ: ₹. 1,500 থেকে শুরু
লোকেশন: 4 ওয়ার্ড, কোল্ভা বিচ, তালুকা
সেলসেট, কোল্ভা, গোয়া 403708
দ্য ক্যামেলট রিসোর্ট
আমাদের পছন্দ: পরিমিত
ব্যয়ে কলনিয়াল আরাম উপভোগের অভিজ্ঞতা
ইউরোপিয়ান স্টাইলে তৈরি রুম আর
চ্যালেট যা সুইমিং পুল বা মদ্যপ তৃণভূমি থেকেও নজর কেড়ে নেয়, এই গোয়া
আপনাকে এক স্মরণীয় কলনিয়াল যুগের অভিজ্ঞতা প্রদান করে যেখানে এর সাথে সাথে আছে
আধুনিক যুগের আরাম আর বিলাসিতাময় জীবন। কলাঙ্গুট বিচ থেকে মাত্র 1.5 কিলোমিটার
আর মাপুসা ফ্রাইডে মার্কেট এবং সিঙ্কুয়েরিয়াম বিচ থেকে 8 কিলোমিটার
দূরের এই হোটেল ভ্রমনকারীদের এই বিচ শহরে সিক্ত হতে সুযোগ দেয়। পুলের ধারের বারে
ককটেল আর ড্রিঙ্ক, মাল্টি-কুসন
রেস্টুরেণ্টে খাবার আর বিশেষ রেস্টুরেণ্টে সুস্বাদু সামুদ্রিক খাবার এই শহরে জমাটি
খাওয়া-দাওয়ার পরিবেশ গড়ে তোলে।
খরচ: ₹. 3,000 থেকে শুরু
লোকেশন: বাগ্রা-এয়ারপোর্ট রোড, কোবরা
ভ্যাডো, কলাঙ্গুট
, গোয়া
403516
বলিউড হোটেল
আমাদের পছন্দ: সম্পূর্ণভাবে
পরিমিত ব্যয়ে গোয়ার অভিজ্ঞতা
আরেকটি রিসোর্ট যা শান্তির কোল্ভা
বিচ থেকে কিছু মিনিটের দূরত্বে। যদি আপনি নির্মেঘ বিচ- বালির দুর্গ তৈরি, সূর্যাস্ত
দেখতে দেখতে হেঁটে বেড়ানো বা রূপালী বালিকে ফ্যানাযুক্ত ঢেউয়ের চুম্বন- উপভোগ করতে
চান, তাহলে
বলিউড হোটেল আপনার জন্য একদম সঠিক। যদি আপনার সমুদ্র আর বালি দেখে মন ভরে যায়
তাহলে পুলের ধারে যান,
খেজুর গাছে ভরা বাগানকে উপভোগ করুন বা এই তিনটি স্টারওয়ালা রিসোর্টে আয়ুরবেদিক
ট্রিটমেন্ট করান।
খরচ: ₹. 1,800 থেকে শুরু
লোকেশন: কোল্ভা বিচ, স্যালসেট, কোল্ভা , গোয়া 403708
বেলে উইস্তা ওয়াদো- এনভির গ্রীন রিসোর্ট
আমাদের পছন্দ: যারা
খেতে ভালবাসেন আর খাঁটি গোয়ার অভিজ্ঞতা খুঁজছেন
এই মনোরম গোয়ার স্টাইলে কটেজের মত
রিসোর্ট সাঁনগোল্ডা পঞ্চায়েত এবং কলাঙ্গুট বিচ থেকে 4.5 কিলোমিটার
দূরে। গোয়ার স্বাদে রসাস্বিত হয়ে শহরের আশেপাশে বিচ অন্বেষণ করুন। বেলে উইস্তা
ওয়াদোতে 12টি
বাংলো স্টাইলের রুম আছে এয়ার-কন্ডিসনিং-এর সাথে আর আরামদায়ক দুটি স্যুট আছে। যারা
সামুদ্রিক খাবারে টিকে থাকতে চান, চলে আসুন গোয়া স্টাইলে তৈরি করা খাবারের জায়গায়, মুনফিশ
রেস্টুরেন্টে যা আপনাকে সুন্দর আহার পরিবেশন করে। মাদেইরা, অন্য আরেকটি
রেস্টুরেন্ট যা কন্টিনেন্টাল খাবারের জন্য জনপ্রিয় আর রুফটপ বারবিকিউ আপনাকে জিভে
জল নিয়ে আসা গ্রিল্ড খাবারের স্বাদ অনুভব করায়।
খরচ: ₹. 2,000 থেকে শুরু
লোকেশন: 162, চোগম রোড
সাঁনগোল্ডা, বারদেজ, সাঁনগোল্ডা, গোয়া 403511
FAQ:-
প্রঃ কত সালে পর্তুগীজরা গোয়া দখল করে?
উঃ 1510 খ্রিষ্টাব্দে বিজাপুরের অদিল শাহ্ কে যুদ্ধে হারিয়ে গোয়া দখল করেন, তৎকালীন পর্তুগিজ গভর্নর আফোনসো ডি আলবুকার্ক
প্রঃ গোয়া ভারতের কোথায় অবস্থিত?
উঃ ভারতবর্ষের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত একটি রাজ্য। গোয়ার উত্তরে অবস্থিত মহরাষ্ট্র, পূর্ব-দক্ষিণে কর্ণাটক রাজ্য আর পশ্চিম উপকূল আরব সাগর দ্বারা বেষ্টিত।
প্রঃ গোয়া কিসের জন্য বিখ্যাত?
উঃ গোয়া তার অপূর্ব সমুদ্র সৈকতের জন্য সার বিশ্ব বিখ্যাত। প্রতি বছর শীতকালে এখানে প্রচুর বিদেশী পর্যটকের আগমণ ঘটে।
প্রঃ গোয়া রাজধানীর নাম কি?
উঃ গোয়ার রাজধানী পানাজি।
প্রঃ গোয়া হোটেল ভাড়া কত?
উঃ প্রতিরাত হোটেল ভাড়া ১৫০০/-টাকা থেকে শুরু করে আনুমানিক ১ লক্ষ টাকা ভাড়া দিয়ে দিয়ে থাকবার হোটেল পেয়ে যাবেন গোয়াতে।
5 মন্তব্যসমূহ
Nice Niche
উত্তরমুছুনNice
উত্তরমুছুনinformative post
উত্তরমুছুনnice
উত্তরমুছুনGood Information
উত্তরমুছুন