যোগাসন- এর উপকারিতা আধুনিক জীবনেও অনস্বীকার্য
যোগাসন এর আবির্ভাব ভারতবর্ষে বহু প্রাচীনকালে (৫০০০ বছর পূর্বে)। সেই পুরাণের সময় থেকে ভারতবর্ষে যোগাসনের চর্চা চলছে। আমাদের আধুনিক জীবনযাত্রায় নিজেকে সুস্থ রাখতে যোগাসনের কোনো বিকল্প নেই। তাই সারা বিশ্বে যোগাসনের চর্চা চলছে। ডাক্তারি শাস্ত্রে যোগাসনের উপকারিতাগুলিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু যোগব্যায়াম চর্চার জন্য এ সম্পর্কে সবকিছু সঠিকভাবে জানা প্রয়োজন, যেমন- যোগাসনের নিয়ম, যোগাসন পদ্ধতি, যোগাসনের উপকারিতা, ইত্যাদি।
সবাই চাই সুস্থ শরীর সুস্থ মন এবং কর্মময় জীবন। অসুস্থ শরীর ও মন নিয়ে কর্মময় জীবনে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে, তাই সবারই জীবনে সুস্থ এবং সবল থাকা কর্তব্য। কর্মময় জীবনে ফিটনেস তথা শরীরিক মাপজোক এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
![]() |
যোগাসন কাকে বলে | YOGASAN পদ্ধতি | যোগাসন ব্যায়াম |
সংস্কৃত শব্দ ‘যুজ’ থেকে আহরিত যোগ এর অর্থ হল ব্যক্তি সত্তার সঙ্গে বিশ্ব সত্তার মিলন। যোগ শব্দটি ভারতীয় সভ্যতায় বহু প্রাচীন । ব্যায়াম কথার অর্থ নিয়মিত অঙ্গ চালনা । একটি বিশেষ ভঙ্গিতে মনঃ সংযোগ করে কিছু সময়ের জন্য স্থির ভাবে অবস্থান করাকে বলে আসন বা যোগাসন । শরীর সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে নিয়মিত যোগ ব্যায়াম আভ্যাস করার প্রয়োজন । যোগাসন অনুশীলন করলে দেহ সুগঠিত হয়, শরীর ও মনের বিকাশের জন্য সহায়তা করে । আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না যোগ বা যোগা আসলে কী? যোগা কথার সাধারণ অর্থ ইউনিয়ন বা মিলন। এ মিলন কার সঙ্গে কার। আপনার সঙ্গে এ সম্পূর্ণ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের। মানুষের দেহ, মন ও এনার্জি বা শক্তি- এ তিনটি জিনিসের সমন্বয়ে আমাদের শরীর চলে। যোগা নিয়মে মানুষকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে –
Ø আন্না মায়াকোশা বা খাবারের মাধ্যমে যে শরীর তৈরি
হয়েছে তাকে বুঝায়।
Ø মানো মায়াকোশা বা যেটা আমাদের মনকে বোঝায়।
Ø প্রাণা মায়াকোশা বা যেটা শরীরের শক্তিকে বোঝায় বা
এনার্জিগুলোকে বুঝায়। - এ তিনটি ভাগ
শারীরিক যেগুলো আমরা অনুভব করতে পারি। বাকি দুটি হল দৃশ্যমান নয় যেগুলো আমরা অনুভব
করতে পারি না। যখন ওপরের তিনটি ব্যালেন্সভাবে কাজ করলে বাকি দুটিকে আমরা
এক্সিপ্রিয়েন্স বা অনুভবন করতে পারি। বাকি দুটি হল-
Ø ভিগনাম মায়াকোশা বা বিজ্ঞান বা তার অর্থ বিশেষ জ্ঞান
যা আমাদের পঞ্চইন্দ্রিয়র বাইরে।
আনান্দা মায়াকোশা বা আনন্দ এটা নন-ফিজিক্যাল যেটা আমরা অনুভব করি মাত্র।
যোগাসনের অভ্যন্তরীণ
স্বাস্থ্য উপকারিতা –
১.
রক্ত সঞ্চালন: Blood circulation
২.
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে: Lowered Blood Pressure
৩.
শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির সমস্যা কমাতে: Lowered Respiratory
Rate
৪.
গ্যাসের জন্যে ভাল: Improvement In Gastrointestinal Health
৫.
ধৈর্য্য শক্তি বাড়ে: Higher Levels Of Pain Tolerance
৬.
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে: Increased Immunity
৭.
শরীরে শক্তি ও সতেজতা আসে: Renewed Energy
৮.
পাচনতন্ত্রের বিকাশ: Increased Metabolism
৯.
ঘুম সঠিক হয়: Sleep
১০.
কোলেস্টরল কমে আসে: Dropping The Cholesterol
১১.
শরীরে সোডিয়াম নিয়ন্ত্রণে থাকে: Keeping The Sodium In Check
১২.
ট্রাইগ্লিসারাইড কমিয়ে আনা যায়: Cutting Down The Triglycerides
১৩.
লাল রক্তকণিকা বাড়াতে সাহায্য করে: Boosted Red Blood
Cells
১৪.
হার্টের অসুস্থতা কমে: Reduces The Risk Of Heart Diseases
১৫.
এস্থেমা: Asthma
১৬.
আর্থারাইটিস: Arthritis
১৭.
ক্যান্সার: Cancer
১৮.
মাইগ্রেনের জন্যে ভাল: Migraine
১৯.
ব্রঙ্কাইটিসের জন্যে ভাল: Chronic Bronchitis
২০.
কোষ্টকাঠিন্য: Constipation
২১.
বন্ধ্যাত্ব বা রজোবন্ধ: Infertility and Menopause
২২.
সাইনাস বা অন্যান্য এলার্জি: Sinusitis And Other Allergies
২৩. পিঠে ব্যাথা কমায়: Back Pain
আরও পড়ুনঃ অ্যাকুপ্রেসার চিকিৎসা পদ্ধতি
যোগাসনের বাহ্যিক স্বাস্থ্য উপকারিতা –
১. দ্রুত বার্ধক্য
থামায়: Keeps Premature Aging At Bay
২. শক্তি প্রদান করে: Increasing strength
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ করে: Allows You To Maintain The Ideal Weight
৪. শরীরের যাবতীয়
কার্যকারিতা: Integrated Function Of The Body
৫. শরীরকে ভেতর থেকে
শক্ত রাখে: Increasing Core Strength
৬. মাংসপেশী টানটান করে:
Toning of the Muscles
যোগাসনের মানসিকস্বাস্থ্য উপকারিতা –
১. মেজাজ ফুরফুরে রাখে: Uplifts Your Mood
২. মানসিক চাপ কমায়: Reduces stress
৩. উত্তেজনা কমায়: Anxiety Management
৪. আত্মসংযমবোধ বাড়ায়: Builds Self Control
৫.মনোযোগ বাড়ায়: Builds Concentration
![]() |
যোগাসন কাকে বলে | YOGASAN পদ্ধতি | যোগাসন ব্যায়াম |
উপকারিতা – ধ্যান ধারনা অভ্যাসের জন্য
এই আসন গুরুত্বপূর্ণ । এই আসনে পায়ের বাত দূর হয় । মেরুদণ্ড সরল ও নমনীয় হয় । পায়ের পেশি
সবল হয় । মানসিক একাগ্রতা ও ধৈর্য বৃদ্ধি পায় । পড়াশুনায় মনোযোগ বৃদ্ধি পায় ।
২) ভুজাঙ্গসন – এই আসন করার সময় কোমর থেকে দেহের উপরের অংশকে উপরে তুলতে হয় । এই আসন করার সময় শরীর ভুজঙ্গ বা সাপের ফনা তুললে যেমন হয় সেভাবে দেখায় । পা দুটি জোড়া ও সোজা রাখা অবস্থায় চিবুক মাটিতে রেখে উপুড় হয়ে শুতে হবে । দু হাতের তালু বুকের দুপাশে এমন ভাবে রাখতে হবে যেন আঙুল কাঁধের সমান ও কনুই কোমরের সঙ্গে লেগে থাকে । এবার হাতে ভর না দিয়ে কোমরের জোরে বুক ও নাভির উপর অংশ উপরে তোলার চেষ্টা করুন । এই অবস্থান ৪০-৬০ সেকেন্ড পর্যন্ত করবেন । শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হবে ।
![]() |
যোগাসন কাকে বলে | YOGASAN পদ্ধতি | যোগাসন ব্যায়াম |
উপকারিতা – এই আসনের দ্বারা কোমর, বুক, পীঠ, শিরদাঁড়া, পাকস্থলীর কাজ ভাল হয় । মেরুদণ্ডের বক্রতা দূর হয় । মেরুদণ্ডের সামনের অংশে স্নায়ুতন্ত্র গুলি
সলরতর হয় ।
![]() |
যোগাসন কাকে বলে | YOGASAN পদ্ধতি | যোগাসন ব্যায়াম |
উপকারিতা - শবাসন করার ফলে শরীরের সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায় । শরীরে নতুন কর্ম শক্তি আসে । মানসিক উত্তেজনা, চঞ্চলতা, অনিদ্রা, অবসাদ প্রভৃতি এই আসনের দ্বারা দূর হয় ।
৪) বজ্রাসন – পা দুটি পিছনের দিকে মুড়ে গোড়ালি দুটো কিছুটা ফাঁক রেখে তার উপর বসতে হবে । মেরুদণ্ড সোজা রেখে হাত দুটি দুই উরুর উপর সোজা ভাবে রাখতে হবে । শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হবে । প্রথম দিকে কিছুটা অসুবিধা হলেও অভ্যাস করতে পারলে পরে আর কোনো অসুবিধা হবে না ।
![]() |
যোগাসন কাকে বলে | YOGASAN পদ্ধতি | যোগাসন ব্যায়াম |
উপকারিতা – অম্বল, বদহজম, কোষ্টকাঠিন্য ইত্যাদি
পেটের রোগ ভাল হয় । নিয়মিত আভ্যাস করলে সায়টিকা বাত, পায়ের বাত ইত্যাদি হয় না ।
পায়ের পেশি ও স্নায়ু সবল হয় ।
৫) ধনুরাসন – ধনুরাসন করার সময় অনেকটা
ধনুকের মতো দেখতে লাগে । শরীর শিথিল করে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন ।পা দুটি হাঁটুর কাছ
থেকে নিয়ে পিঠের দিকে এনে দু হাত দিয়ে গোড়ালি শক্ত করে ধরুন । পা ও হাঁটু জোড়া
রাখার চেষ্টা করুন । এখন হাত দিয়ে গোড়ালি টেনে ধীরে ধীরে মাথা, বুক ও পা মাটি থেকে তুলুন । ঘাড় যতটা পারেন পিছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা
করুন । শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হবে ।
![]() |
যোগাসন কাকে বলে | YOGASAN পদ্ধতি | যোগাসন ব্যায়াম |
৬) সূর্য নমস্কার – প্রাচীন কালে মুনি ঋষিরা যোগ ব্যায়াম অভ্যাস করার আগে শরীরকে যোগ ব্যায়াম অভ্যাসের উপযোগী করে তোলার জন্য এই আসনটি করতেন । ভঙ্গি গুলি একটা ছন্দময়য় গতিতে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত করতে হয় ।
![]() |
যোগাসন কাকে বলে | YOGASAN পদ্ধতি | যোগাসন ব্যায়াম |
উপকারিতা – অল্প সময়য়ের মধ্যে দেহের
জড়তা কেটে যায় । দেহ যেকোনো কাজের উপযোগী হয়ে ওঠে । বুকের, কোমরের, পীঠের, হাতের, কাঁধের ও পায়ের পেশি
সুগঠিত হয় । শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়, শ্বাসযন্ত্র সবল হয় ।
৭) সহজ প্রানায়ন – আমাদের শ্বাসকার্যে প্রধান
ভূমিকা নেয় ফুসফুস । ফুসফুসের ক্ষমতার অর্ধেকের কম অংশ ব্যবহার হয় । সহজ
প্রানায়নের উদ্দেশ্য হল যে ফুসফুসের সম্পূর্ণ অংশকে ব্যবহার করে দেহে অক্সিজেনের
সরবরাহ বাড়ানো । যে কোন আসনে বসে মেরুদণ্ড সোজা রেখে গভীর ভাবে শ্বাস নিতে হবে ।
যখন আর শ্বাস নেওয়া যাচ্ছেনা তখন আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস ছাড়তে হবে । যতটা সময় নিয়ে
শ্বাস নেবেন তার থেকে বেশি সময় নিয়ে শ্বাস ছাড়তে হবে ।
উপকারিতা - ফুসফুসের জন্য খুব উপকারী । মানসিক একাগ্রতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ে । দেহে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ে । সর্দি, কাশি হাঁপানি ভালো হয় । দেহের বাইরে দূষিত পদার্থ বেরিয়ে যায়.
যোগাসনের নিয়ম – যা জানা থাকলে আপনার আরো বেশি উপকার হবে। নিচে প্রয়োজনীয় নিয়মগুলি বিস্তারিত ভাবে দেওয়া হল:
·
সঠিক পোষাক
ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক পোষাক পরে যোগাসন করতে হয়। তার সাথে
অবশ্যই দরকার একটি যোগাসন করার ম্যাট যার ওপরে বসে অনুশীলন করতে হবে। যোগাসন সবসময়
খালি পায়ে করা উচিত
খেয়াল রাখতে হবে যেন যোগাসন করার আগে পেট খালি থাকে। অর্থাৎ
যোগাসন করার অন্তত ২ থেকে ৪ ঘণ্টা আগে খাবার খাওয়া যায় এবং হয়ে যাওয়া ২ ঘণ্টা পর
খাওয়া যায়। না’হলে শরীরে অস্বস্তি হতে
পারে।
·
নিঃশ্বাস প্রশ্বাস
যোগাসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ শেখার বিষয় হল নিঃশ্বাস
প্রশ্বাসের দিকে খেয়াল রাখা তাতে ফল পাওয়া যায়।
·
জোর না করা
জোর করে না করে ধীরে ধীরে করা উচিৎ নাহলে শরীরে ব্যাথা আরো
বেড়ে যাবে।
অনেকের ধারণা, যোগাসন করতে গেলে খুব সাবলীল ও রোগ শরীর
প্রয়োজন হয়। কিন্তু একথা একেবারে ভুল। আপনার ওজন যাই হোক না কেন, আপনি তা নিয়েই নিজের সুবিধা মত যোগাসন করতে
পারেন।
FAQ:-
প্রঃ যোগাসন কাকে বলে
উঃ সংস্কৃত শব্দ ‘যুজ’ থেকে আহরিত যোগ এর অর্থ হল ব্যক্তি সত্তার সঙ্গে বিশ্ব সত্তার মিলন। যোগ শব্দটি ভারতীয় সভ্যতায় বহু প্রাচীন । ব্যায়াম কথার অর্থ নিয়মিত অঙ্গ চালনা । একটি বিশেষ ভঙ্গিতে মনঃ সংযোগ করে কিছু সময়ের জন্য স্থির ভাবে অবস্থান করাকে বলে আসন বা যোগাসন ।
প্রঃ যোগাসন-এর নাম
উঃ ধনুরাসন, পবন মুক্তাসন, সর্বাঙ্গাসন, শবাসন, বিষ্ণু আসন, নটরাজাসন, হলাসন, পবন মুক্তাসন, মৎস্যাসন, সেতুবন্ধাসন, শলভাসন, বিপরীত শলভাসন, ভুজঙ্গাসন, সলম্ব ভুজঙ্গাসন, ধনুরাসন, শিশু আসন, চাক্কি চালনাসন, উৎকটাসন, অর্ধচক্রাসন, জানুশিরাসন ইত্যাদি।
প্রঃ যোগাসন করার সঠিক সময়
উঃ সূর্য উদয়ের আগে ভোরবেলা যোগাসন করা সবচেয়ে বেশী ফলপ্রসূ, এতে শরীর ও মন দুই সচল ও সতেজ থাকে।
5 মন্তব্যসমূহ
Nice Post
উত্তরমুছুনHelp full Info
উত্তরমুছুনNice Niche
উত্তরমুছুন👌👌👍
উত্তরমুছুনGood
উত্তরমুছুন